তালিবানিদের প্রশংসা শুনেই বেজায় চটলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। তাঁর কলম থেকে ঝরে পড়ল কটাক্ষের তীব্র বিষ। ঝরে পড়বেই না বা কেন? বর্তমান আফগানিস্তানের চেহারাটা এখন সবার চোখেই তো ভাসছে। মিডিয়ার দৌলতে আফগানিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে থাকা মানুষও দেখতে পাচ্ছেন বন্দুকধারী তালিবানিদের নির্মম অত্যাচারের দৃশ্য। রাস্তায় বেরোনো মানুষের ওপর অকারণ নিপীড়ন চালাচ্ছে, মহিলাদের ওপর অকথ্য অত্যাচারের কথা তো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে মুখ খুললে তসলিমা নাসরিন।
ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘তালিবান তো বলেছিল মেয়েদের অধিকার তারা মেনে নেবে শরিয়ত অনুযায়ী। তারা কথা রেখেছে। শরিয়ত অনুযায়ীই মেয়েদের পেটাচ্ছে, চাবুক মারছে, হুমকি দিচ্ছে, বন্দি করছে, অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, এমনকী মেরেও ফেলছে।’’ এই লেখা থেকেই পরিষ্কার তিনি কিভাবে তালিবানি শাসনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন।
এখানেই শেষ নয়। সদ্য তমাল ভট্টাচার্য নামে এক শিক্ষক আফগানিস্তান থেকে ফিরে এসে তালিবানিদের প্রশংসা করেছিলেন। তার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছে তসলিমা নাসরিন। ফেসবুকেই আর একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘তমাল ভট্টাচার্য নামের এক বাঙালি বাবু আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক ইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তিনি দেশে ফেরার সময় তালিবান জঙ্গিদের সামনে পড়েছিলেন। তালিবানদের মধুর ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ হয়ে তাদের গুণগান গাইছেন এখন। তালিবান জঙ্গিরা ভোটে জিতে নয়, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসেছে, জঙ্গিরা ১৪০০ বছরের পুরোনো শরিয়া আইন জারি করবে, শরিয়া আইন কী ভাবে মেয়েদের পাথর ছুঁড়ে হত্যা করে, মেয়েদের বোরখার অন্ধকারে বন্দি করে, মেয়েদের ইস্কুল কলেজে যাওয়ার, উপার্জন করার, স্বনির্ভর হওয়ার অধিকার ছিনিয়ে নেয়, বাঙালি বাবুটি নিশ্চয়ই জানেন, তারপরও কী করে তিনি বলেন নব্বই দশকের তালিবান আর এখনকার তালিবানে বিস্তর তফাৎ! তাদের ব্যবহারে তিনি তফাৎ দেখেছেন, কিন্তু যে শরিয়া আইনের অধীনে দেশ শাসন করতে তারা বদ্ধ পরিকর, সেই শরিয়া আইন তো একই আছে, নব্বই দশকে যা ছিল, এখনও তো তাই। তালিবান যদি আগের চেয়ে ভালো হতো এখন, যদি সত্যিই তাদের পরিবর্তন হতো, তাহলে শরিয়া আইনের নাম তারা মুখে আনতো না।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘পুট ইয়রসেলফ ইন মাই সুজ।’ তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে বলে তালিবান ভালো? তারা অন্যের সঙ্গে কী ব্যবহার করছে তা দেখে তো তাদের সম্পর্কে রায় দিতে হবে! আফগান মেয়েরা যদি বলে আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে তালিবানদের সম্পর্কে মন্তব্য করো, তাহলে? তমাল যদি বাঙালি বাবু না হয়ে কোনও স্বাধীনচেতা আফগান মেয়ে হতেন, যে মেয়ে বোরখা বা হিজাবের শৃঙ্খল পছন্দ করেন না, তমাল ভট্টাচার্যের মতোই আন্তর্জাতিক ইস্কুলে শিক্ষকতা করতে চান, স্বর্নিভর হতে চান, তাহলে?
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৪০ বার