তাহিরপুরের হাওর পাড়ে বাতাশে শুধু কৃষকের আর্তনাদের শব্দ
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
তাহিরপুরে বৃহত্তর শনির হাওরের ৭কিয়ার বোরো জমি চাষ করেছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে। এক মুটও কাটতে পানি নাই। চোখের সামনের আধা পাকা-কাচাঁ ধান পানির নিছে গেছে। শুধু নিরব দর্শকের মত দেখলাম কিছুই করতে পারলাম না। আমরা ত আর লাইনে গিয়ে দাড়াঁইতে পারতাম না কাউরে কইতেও পারতাম না কেমনে দিন জাইব কথা গুলো বলছিলেন তাহিরপুর উপজেলার উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক বাদল মিয়া। বীর নগড় গ্রামের কৃষক সাদেক আলী জানান,ভাইরে গত বছর ৭০কিয়ার বোরো ধান করছিলাম সব ধান পানিতে নিছে এক মুটও কাটতে পারি নাই। এইবার ও সব নিল কি করমো ভেবে পাইতাছিনা জীবন ভর কষ্টের হয়ে গেলে। সবার মত কাদঁতেও পারতাছি না। কৃষক সোহাগ মিয়া কেদেঁ কেদেঁ বলেন,ভাই সব শেষ জীবনের মায়া ছেরে বাধেঁ কাজ করছিলাম এই হাওরটা(শনির হাওর) রক্ষা করার লাগি। সেই বাঁধ ভেঙ্গে হাওর ডুবে গিয়ে চারদিকে এখন পানি আর পানি। উপজেলার মধ্যবিত্ত কৃষকরা বলেন,ভাই কি কইতাম যা হবার ত কাই হইছে। বাঁধ সঠিক ভাবে সময় মত বাঁধলে এত বড় বিপদ হত না। টাকা নিজের পকেটে বরভার লাগি আমরার হাওরের বাধেঁ কাজ করে নাই। আমরা শুধু কইতে পারি কিন্তু কিছু করতে পারি না কারন শক্তি নাই। আমরার কথার কোন দাম নাই। আমরা এখন আছি মহা বিপদে এই হাওরের(শনির হাওর) উপরেই আমাদের জীবন চলে। এখন এমন অবস্থা কাঁদতে পানি না আবার সইতেও পারিতাছিনা। হাওর জুড়ে হাহাকার বিরাজ করছে। এমন অসহায়ত্বের কথা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক পরিবারের মাঝে। সবার একটাই কথা বাঁধ নির্মানে দূনীর্তি বাজদের শাস্তি আর প্রয়োজনীয় সরকারী সহযোগীতা। উপজেলার ভাটি তাহিরপুরে গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন,হাওর পাড়ের চারদিকে কৃষকের আহাজারিতে ভারী হয়েউঠেছে বাতাশ কোন ভাষা পাচ্ছি না। সব হাওর ডুবে যাওয়ায় শনির হাওরটিই ছিল ১০হাজার হেক্টর বোরো ধানের শেষ সম্ভল। শুধু তাহিরপুর উপজেলায় নয় সুনামগঞ্জ জেলা জুড়েই বিরাজ করতে শোকের ছায়া। সর্ব শেষ ডুবে গেল জামালগঞ্জের পাকনার হাওর এতে ক্ষতির পরিমান ১০হাজারের অধিক। এর পর আর কোন হাওর রইলা সুনামগঞ্জে। জানাযায়,সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় গত শনিবার দিন গত মধ্য রাতে শনির হাওরের বাঁধ লালুরগোয়ালা সহ ৩টি বাঁধ ভেঙ্গে ফসল হারিয়ে সর্বতই হাহাকার বিরাজ করেছে। হাওর চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করছে এখন। একমাত্র জীবন বাঁচার সম্পদ,কষ্টে ফলানো সোনার ফসল চোখের সামনে পানিতে ডুবে যাওয়া দৃশ্য দেখে তাদের চোখের পানি একাকার হচ্ছে পাহাড়ী ঢলের পানির সাথে। আর তাদের আর্তনাধ,আহাজারিতে এক হ্নদয় বিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে শনির হাওর পাড়ে। অথছ গত শনিবার পর্যন্ত সবুজের সমারোহে পরিনত ছিল এই হাওরটি। কিন্তু শেষ র্দীঘ ২৫দিন বানের পানির সাথে যুদ্ধ করে শেষ রক্ষা আর হল না শনিবার মধ্য রাতেই প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে যায় শনির হাওরর লালুরগোয়ালা সহ ৩টি বাঁধ। আরো জানা যায়,শনি হাওরটি উপজেলা প্রধান বোরো উৎপাদন সমৃদ্ধ হাওর। এ হাওরে সাড়ে ৬হাজার হেক্টরে অধিক ও পাশ্বভর্তি জামালগঞ্জ উপজেলার সাড়ে ৩হাজার হেক্টর বোরো ধানের চাষাবাদ করেছে ৪০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকগন। পানিতে হাওরটি ডুবে যাওয়ায় এ হাওরের কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে। উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওর হাওরের কাচাঁ,আধা পাকা বোরো ধান একবারেই পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ২০হাজারের হেক্টরের অধিক হবে বলে জানায় হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগন। স্থানীয় কৃষকগন জানান,উপজেলার প্রতিটি বাঁধের যখন খারাপ অবস্থা খবর পেয়েছেন তখনেই বাঁধ রক্ষায় ফাঠল ও দেবে যাওয়া অংশে সংস্কারের কাজ করেছে হাওর পাড়ে কৃষকগন দিন-রাত সেচ্চা শ্রমে। এই ফসল ফলাতে আমরা এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ছড়া সুদে নেওয়া ঋন নেওয়ায় পরিশোধ ও ছেলে মেয়েদের পড়া শুনা ও জীবন কিভাবে বাঁচাব এ নিয়ে হতাশায় মধ্যে আছি। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও ৪০ভাগ কাজও শেষ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পিআইসিরা। অনেক হাওর পাড়ে বাঁধ নির্মান না করে পানি বাড়ার সাথে সাথে তড়িগড়ি করে নামমাত্র মাটি দেয় কর্মকর্তা কর্মচারী,ঠিকাদার ও পিআইসির প্রতিনিধিরা।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান-এ উপজেলার এবার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ শনির হাওরটি ডুবে যাওয়ায় এই এলাকার মানুষ এক বারেই নিঃশ্ব হয়ে গেল। সাধারন কৃষকরা এখন বড় বিপদে আছে তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-এবার উপজেলার সবকটি হাওর ডুবে গেছে জীবন বাজি রেখে শেষ শনির হাওরটি বাচাঁতে হাজার হাজার দিন রাত বাধেঁ রক্ষা কাজ করেছিলাম। শেষ রক্ষা আর হল না। সবার সব পরিশ্রম বিফল করে পাহাড়ী ঢলের পানি বাঁধ ভেঙ্গে হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল। হাওরটিও রক্ষা করতে না পেরে এখন হাওর পাড়ে কান্নার রোল পরেছে কৃষক পরিবারের মাঝে। সঠিক ভাবে বাঁধ নির্মাণ না করার কারনে একের পর এক হাওর ডুবছে এ উপজেলায়।