তাহিরপুর :: তাহিরপুরে হতদরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এনজিও এসবিএসের বিরুদ্ধে। উপজেলার হাওর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ভাসমান বীজতলা তৈরি, বিষমুক্ত শাকসবজি চাষ এবং হাঁস প্রতিপালনে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার ও শুধু কাগজপত্রে প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে এনজিও সংস্থাটি। অভিযোগ উঠেছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় অফিসের যোগসাজশে কোন কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছে। প্রকল্প প্রস্তাবনা এবং অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় ৪ ব্যাচে ৮০ জন উপকারভোগী নারীকে ভাসমান বীজতলা তৈরি, বিষমুক্ত শাকসবজি চাষ প্রশিক্ষণ এবং একটি ব্যাচে ২০ জন উপকারভোগী নারীকে হাঁস প্রতিপালনের ওপর ১০ দিন করে প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা। সেইসঙ্গে হাঁস প্রতিপালন বাবদ ২২ হাজার ১৪২ টাকা, সবজি চাষাবাদ বাবদ ২১ হাজার ৪২৮ টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি দিচ্ছেনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় হাওর এলাকার সুবিধা বঞ্চিত নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় ভাসমান বীজতলা তৈরি, বিষমুক্ত শাকসবজি চাষ এবং হাঁস প্রতিপালনের জন্য ৫টি জেলার ২৮টি উপজেলায় দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি গ্রহণ করে। দুই বছর মেয়াদি কাজের উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। প্রকল্প বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পায় সোসাইটি ফর ব্রাইট সোস্যাল সার্ভিসেস (এসবিএসএস) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলায় বালিজুরী, তাহিরপুর সদর, দক্ষিণ বড়দল ও বাদাঘাট ইউনিয়নে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তাহিরপুরে এক বছর অতিবাহিত হলেও কোথাও প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হয়নি। কাজ না করে সংস্থাটি কাগজ-কলমে প্রথম বছরের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে উত্তোলন করছে এমন অভিযোগ সুবিধাভোগীদের।
প্রসঙ্গত, ওই প্রকল্প সুনামগঞ্জসহ ৫টি জেলার ২৮টি উপজেলায় রয়েছে। আর ২৮টি উপজেলায় হতদরিদ্র নারীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উত্তর পাশে এক পুকুরে একটি ভাসমান সবজি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। সরেজমিন ওই পুকুরে দেখা মেলে কচুরিপানার। কোথাও দেখা যায়নি ভাসমান সবজি প্রকল্প। উপজেলার চার ইউনিয়নের একাধিক সুবিধাভোগী জানান, তারা ট্রেনিং, সবজি চাষ বা খামার বাবদ পেয়েছেন মাত্র ১২শ’ টাকা। সূত্র আরও জানায়, ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারক করতে দুই বছরের জন্য একজন অভিজ্ঞ কৃষি ডিপ্লোমাধারী, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ২৮ জন প্রশিক্ষক এবং ১৫ বছর বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন এমএজি পাস (কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী) প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী নিয়োগ দেওয়ার কথা সংস্থাটির। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটাই করেনি তারা।
প্রকল্প সুবিধাভোগী উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নরে রিনা বেগম বলেন, আমাদের ৭ দিন ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ১০০ টাকা দেওয়া হয়েছে, হাঁস পালন বা খাবারের কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। আরেক সুবিধাভোগী উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের লাকী বেগম জানান, যতদিন তিনি ট্রেনিং নিয়েছেন ততদিন তিনি দৈনিক ১০০ টাকা পেয়েছেন। এসবিএসএসের নির্বাহী পরিচালক ফেরদৌস আহমেদ মোবাইল ফোনে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হবে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজ শুরু করা হয়নি, ঈদের পরে শুরু হবে। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, প্রথম বছরে দৃশ্যমান কোনো কাজ ওই এনজিও আমাদের দেখাতে পারেনি। আর আপনারা যতটুকু দেখেছেন আমিও ততটুকুই দেখেছি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১১১ বার