তাহিরপুরে পাহাড়ী ঢলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ
রাজন চন্দ-
সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ হাওরাঞ্চল ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের (বালিজৃুরি,দক্ষিন শ্রীপুর ,উত্তর শ্রীপুর,উত্তর বড়দল ও বাদাঘাট) প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে,ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাহিরপুর উপজেলার লক্ষাধিক জনগোষ্টি। সেই সাথে প্লাবিত হয়েছে হয়েছে উপজেলার অর্ধশতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর –সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি জায়গা ভেঙ্গে গেছে এবং রাস্তায় পানি উঠার কারনে গত দু,দিন ধরেই সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (১১ জুলাই ) সরজমিনে উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজার ব্রীজ সংলগ্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে রাস্তার অনেকা জায়গা ভেঙ্গে গেছে এবং রাস্তার উপরে প্রায় ২ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুছ ছালাম জানান, উপজেলার বাদাঘাট, বালিজুরি, উত্তর বড়দল, দক্ষিন বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে প্রায় ৮ হাজার একর চাষকৃত রুপা আমন জমি ও বীজতলা, বিভিন্ন প্রকার রবিশস্য এর জমি পাহাড়ী ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আগাম রোপনকৃত আমন ফসল ব্যাহত হওয়ার আশংখা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী বৈরী আবহাওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দফায় দফায় নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও মাহারাম নদী দিয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসাথে স্থানীয় অন্যান্য নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া ও প্লাবিত গ্রামগুলো বাদাঘাট ইউনিয়নের লামাশ্রম, রাজারগাঁও, লোহাজুড়ি ছড়ারপাড়, বিন্নাকুলি বাজার, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর হাইস্কুল, জনতা হাইস্কুল, বড়দল উচ্চবিদ্যালয়, বাগলী, বীরেন্দ্রনগর উচ্চ বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আমৈতল, রামেশ্বরপুর। বালিজুরি ইউনিয়নের দক্ষিনকুল, বারুঙ্কা, আনোয়ারপুর, তাহিরপুর সদর খাদ্য গোদাম এলাকা, জয়নাল আবেদীন কলেজ, দক্ষিন শ্রীপুরের পন্ডুপ বাজার, লামাগাও বাজার, এ ছাড়াও গ্রামীন রাস্তাঘাট, বক্স কালভার্ট ভেঙ্গে গ্রামীন যোগাযোগ বিনষ্ট হয়ে পেড়েছে। অন্যদিকে উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে পানি প্রবেশ করায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। হাওরাঞ্চলে দৈনন্দিন আয়ের মৎস্যজীবি জেলেরাও প্রতিদিনের ভারী বৃষ্টিপাত, হাওরের একাকার উত্তাল ঢেউ এর ফলে হাওর ও নদীতে মাছ ধরতে পারছে না। ফলে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলার হাটবাজার, স্কুল, কলেজ অফিস আদালত ও ব্যাংকগুলোতে জন উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আবহাওয়ার এরুপ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিগত ২০০৪ সালের বন্যাকেও হার মানাবে বলে এলাকার জনসাধারন মন্থব্য করেছে।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসান জানান,গত দু,তিন ধরেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশে পানি প্রবেশ করায় রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে সম্যসা হচ্ছে। তাছাড়া পাহাড়ি ঢল এবং বন্যায় সংক্রামক এবং পানিবাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আমরা তা চিকিৎসার জন্য পুর্ব প্রস্তুতি রাখছি। তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন জানান,গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারনে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আবুল হোসেন খাঁন জানান, বিগত কয়েকদিনের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার অনেকগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমাদের হাওরাঞ্চলের মানুষ বর্তমানে খুব কষ্টে দিনানিপাত করছে।