দুর্যোগ কবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১২৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চলতি অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৮ হাজার ৪৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ের ১৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের প্রকল্পগুলোর বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জানান, ৬৪টি জেলায় ৬৬টি (ঢাকা ও পটুয়াখালী জেলায় ২টি করে) ত্রাণ গুদাম নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি দুর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রতিবছর বন্যা, ঝূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী-ভাঙ্গন, অগ্নিকাণ্ড, বজ্রপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয় হয়। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বন্যা, নদী ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, উত্তর অঞ্চলে প্রচণ্ড শীত ও খরা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এ সকল দুর্যোগে ত্রাণ সামগ্রী দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে সংরক্ষণের জন্য কোনো ত্রাণ গুদাম নেই। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অপর্যাপ্ত পরিসরে এবং কোনো কোনো জেলায় পরিত্যক্ত ভবনে ত্রাণসামগ্রী যেমন, ঢেউটিন, তাবু, কম্বল এবং অন্যান্য শীতবস্ত্র, শুকনা খাবার, রান্না করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংরক্ষণ করা হয়। ফলে এসব ত্রাণসামগ্রীর গুণাগুণ নষ্ট ও চুরি হয়ে যায়। দুর্যোগের কারণে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর নিকট দ্রুত ত্রাণসামগ্রী ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। সভায় ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩২৭টি সরকারি ও ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সকল বিদ্যালয়সমূহে প্রায় ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্র/ছাত্রী পাঠ গ্রহণ করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য ভবন নির্মাণ এবং এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে। এসময় তিনি সাম্প্রতিক শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আন্দোলনের বিষয়ে বলেন, এমপিওভুক্তির দাবিতে এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি পূরণ হতে আরো সময় লাগবে।
সভায় ১ হাজার ৫০৭ কোটি ৪৩ লাখ ব্যয়ে বন্যা প্রবণ ও নদী ভাঙন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২৪৭টি উপজেলায় ৪২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। সভায় ১৫৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম প্রকল্প, ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩, ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ কারখানা স্থাপন প্রকল্প, ৮৭৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্প, ৫৯৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার সাথে সংযুক্ত চাঁপাপুর-বরুড়া, নিমসার-বরুড়া এবং খাজুরিয়া-বরুড়া জেলা মহাসড়ক তিনটি যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৫৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি র্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ১১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক এর ৩য় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকল্প (ইসিআরআরপি): এলজিইডি অংশ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকল্প (ইসিআরআরপি): প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেশন এন্ড মনিটরিং ইউনিট অংশ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২২৫ বার