লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ। লাশের সংখ্যা ও পরিচয় নির্ধারণ নিয়ে গাফিলতি, ঘরছাড়া মানুষদের স্থানান্তরসহ নানা ইস্যুতে ক্ষুব্ধ লন্ডনবাসী। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে সইতে হচ্ছে তীব্র সমালোচনা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও হতাহতদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে পারেননি। ঘটনাস্থলে গিয়েও দেখা করেননি বেঁচে যাওয়া বাসিন্দা ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে। অথচ বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনকে দেখা গেছে আহতদের সঙ্গে আলিঙ্গন করে সান্ত্বনা দিতে। অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। তবে উদ্ধারাভিযান চলছে। লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এ খবর দিয়েছে ডেইলি মেইল ও মেট্রো।
তেরেসা মে দাবি করেন, নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে তিনি তখন ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। কিন্তু শেষতক তীব্র চাপের মুখে স্থানীয় সেইন্ট ক্লেমেন্টাইন’স চার্চে ভিকটিমদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও, ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হয় ধুয়োধ্বনি। অনেকে চিৎকার করে বলেন, ‘কাওয়ার্ড’, ‘শেইম অন ইয়ু’!
এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রাখে একদল পুলিশ সদস্য। তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠলেও, তার গাড়িবহরের পিছু পর্যন্ত নেয় উত্তেজিত জনতা। একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমরা আপনাকে এখানে দেখতে চাই না।’ আরেকজন বলে উঠেন, ‘ডিইউপি’র বন্ধুদের কাছে ফিরে যান।’ একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ (আমরা সুবিচার চাই)।
নিজের কার্যালয়ে পৌঁছে হতাহতদের জন্য ৫০ লাখ পাউন্ডের জরুরি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু অসন্তুষ্ট লোকজন শিগগিরই বিক্ষোভের আয়োজন করেন। সেখান থেকে আওয়াজ উঠে, ‘তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।’ শুধু এতেই শেষ নয় তেরেসা মে’র দৈন্যদশা। ক্লেমেন্টাইন’স চার্চে থেকে ফিরে বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানে উপস্থাপক এমিলি মেইটলিসের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি জনগণের অনুভূতি বুঝতে ভুল করেছেন কিনা। জবাবে তিনি নিজের চিরাচরিত ‘রোবোটিক’ স্বরে বলতে থাকেন, এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবেও খুব সাদামাটা জবাব দেন তিনি। এ সাক্ষাৎকারের পর রোষ যেন আরো উস্কে উঠে। টুইটারে অনেকে সমালোচনা করেছেন তার। বলেছেন, তেরেসা মে’র কণ্ঠে হতাহতদের জন্য সহানুভূতির লেশমাত্র ছিল না। এছাড়া স্থানীয় জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়েও অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শেষ পর্যন্ত ডাউনিং স্ট্রিটে ভিকটিমদের সঙ্গে দেখা করার নতুন ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে বিরোধী নেতা করবিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ৫০ লাখ পাউন্ডের তহবিলই হতাহতদের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত কেনসিংটন ও চেলসির মতো এলাকাতেই হতাহতদের পুনর্বাসনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যেই তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন, তার কারণে যাতে ভিকটিমদের কোনো আইনি পদক্ষেপ বিলম্বিত না হয়। নিহতদের শেষকৃত্য ও বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজনের ভিসা প্রাপ্তি সহজীকরণ করার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে হতাহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি নিজের জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া বিবৃতিতে বলেছেন, এই দিনটি বৃটিশদের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে উদযাপনের দিন হলেও, এ বছর সারা দেশের বিমর্ষ মেজাজকে এড়ানো অসম্ভব। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৃটেন অনেকগুলো বিয়োগান্তক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। জাতি হিসেবে আমরা সকলের জন্য প্রার্থনা করি যারা এসব ঘটনায় সরাসরি আক্রান্ত হয়েছেন। নিজের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে তিনি গ্রেনফেল টাওয়ার হতাহতদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn