ত্রাণের তালিকায় নাম তুলতে ১০০-১০০০ টাকা!
আতিক রহমান পূর্ণিয়া, সুনামগঞ্জের হাওর থেকে-
হাওরে অকাল বন্যায় নজিরবিহীন ফসলহানি এবং মাছ বিপর্যয়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকারি যে ত্রাণ সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে, তার তালিকা করতে গিয়ে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। খোদ ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য, দায়িত্বশীল নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই আশঙ্কায় সুষ্ঠু ত্রাণ বিতরণের স্বার্থে এখনই উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইছেন। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। দুর্গত হাওর এলাকা নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোথাও কোথাও ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যদের বিরুদ্ধেও ত্রাণের জন্য তালিকা করতে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। গত বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার জয়শ্রী ইউনিয়ন বাজারে কথা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে।
জয়শ্রী ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মাধব চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় শুধু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের তালিকা না করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরামর্শে তালিকা করা দরকার। শুধু চেয়ারম্যান-মেম্বাররা চুপি-চুপি যে তালিকা দিচ্ছে তা সঠিক হবে না।’ এ সময় স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবু লেইস বাধা দিয়ে বলেন, ‘যেহেতু চেয়ারম্যানকে সবাই ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন তাই তালিকা তিনিই করবেন, এটাই নিয়ম।’ পরদিন বৃহস্পতিবার জয়শ্রী বাজারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক বলেেন, ‘ত্রাণের তালিকায় নাম তুলতে অনেকের কাছ থেকেই ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।’ নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মোমেন জানান, তার অনুরোধে খাদ্য সচিব তার এলাকায় ছয়টি ওএমএসের চালের ডিলারশিপ দিয়েছেন। এ খবর পাওয়ার পরপরই ডিলারশিপ নিতে তার কাছে অনেক নেতা তদবির নিয়ে আসতে থাকেন। তখনই তিনি বুঝতে পারেন এভাবে তদবিরে ডিলারশিপ নিলে অবশ্যই চুরি করবে।
সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রবীণ নেতা মতিউর রহমান বলেন, ‘নেতা-কর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে ঠিকমতো সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। সবকিছু প্রশাসন করছে। এটা ঠিক নয়।’ বানভাসি মানুষের কাছ থেকে তালিকায় নাম তুলতে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্যকে প্রশাসন সাবধান করেছে বলে জানিয়েছেন ওই উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে উপজেলার সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ডেকে কড়াভাবে বলা হয়েছে, ত্রাণ নিয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম করা হলে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’