‘ত্রান পায় না হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্তরা’
উপজেলা,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা,দোয়ারা বাজার,ছাতক সহ ১১টি উপজেলা গুলোর কাছে যাদের অবস্থান তারাই পাচ্ছে বেশির ভাগ ত্রান সামগ্রী। আর যারা ত্রান বিতরন করেন তারাও হাওর বেষ্টিত জেলার দ্বীপ সাদৃশ্য ছোট ছোট গ্রাম গুলোতে গিয়ে ত্রান বিতরন করছেন না। ফলে ত্রান পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ পাচ্ছে না নূন্যতম ত্রান ও সহযোগীতা। সময় কম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় কাছা কাছি গ্রাম ও উপজেলা সদরেই ত্রান বিতরন করছে অভিযোগ জানান ত্রান না পাওয়া বিভিন্ন হাওর পাড়ে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক পরিবারের সদস্যগন। এছাড়াও হাওরাঞ্চলে বর্তমানে পাচ্ছে না বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। হাওরের পাড়ে বসবাসকারী জনসাধরন বেশির ভাগেই হাওরের পানি ব্যবহার করছে। ফলে নানান পানি বাহিত রোগে আক্রন্ত ও অনাহারে থাকতে হচ্ছে হাওরবাসীকে।
বোরো ফসল ডুবার সেই দুঃখ ভুলার শোক কাটতে না কাটতেই এখন হাওরপাড়ের অসহায় মানুষ গুলোর মাঝে বিরাজ করে নতুন করে ঝড়ের আতœংক। এর মধ্যেই এখন নতুন আতœংক কাল বৈশাখী ঝড়। এই ঝড় সব সাজানোর গোছানো জীবন কে দিয়েছে আরো এলোমেলো করে। সারাদিনের ব্যাপসা গরম অতিষ্ট হাওরবাসীর মাঝে রাত নামলেই আতœংকের মাঝে রাত্রি যাপন করছে। উৎবেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সর্বস্তরের জনসাধারনের মাঝে। ক্ষনিকের মধ্যেই রুপ বদলায়। তবে এই কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয় সন্ধ্যার পর না হয় মধ্য রাতে আর না হয় ভোর রাতে যার ফলে সন্ধ্যার পর পরেই হাওর পাড়ের কৃষক পরিবার গুলোতে জীবন বাচাঁর তাগিদে করতে হচ্ছে ঝড়ের সাথে যুদ্ধ। কাল বৈশাখী ঝড় শহরের ইট কাঠের ঘড় গুলোতে আঘাত করে কোন ক্ষতি না করতে পারলেও হাওর পাড়ের বসবাসকারী অসহায় জনসাধরনের টিন,মাটি ও ছনের ঘর গুলোকে শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের আঘাতে ছিন্ন বিন্ন করে দেয়। নিঃশ্ব করে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক পরিবারকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন আর ক্ষোব প্রকাশ করছেন সুনামগঞ্জের শিক্ষক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্ধ,জেলা ও উপজেলার সচেতন নাগরিকগন।
সুনামগঞ্জ জেলা কে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবী জানিয়ে সচ্চার জেলার ক্ষতিগ্রস্থ লক্ষ লক্ষ কৃষক পরিবার সহ সর্বস্থরের জনসাধারন। এই অবস্থায় হাওর পাড়ের গ্রাম গুলোতে অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো জীবন বাচাঁর জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। এবার জেলার সর্বমোট আবাদী জমির পরিমান ৩,৭৯,২১৬ হেক্টর। এবার আবাদ করা জমির পরিমান-২,৭৬,৪৪৭ হেক্টর। তার মধ্যে প্রায় ২লাখ ১৫ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। এসব জমিতে প্রতি বছর ৯লক্ষ মেঃটনের অধিক ফসল উৎপন্ন হয়। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশী। এসব ফসল রক্ষায় ৪৮টি হাওরের বাঁেধ ঠিকারদার ছিল ২২জন। ৭৬টি গ্রুপে তারাই একেজন ঠিকাদার ভিন্ন ভিন্ন নামে কাজ নেয়। এর ফলে তারা হাওরের বাঁধ রক্ষার নামে পুকুর চুরি না করে ডাকাতি করায় ৪০ভাগ কাজ হয় নি।
যার জন্য এবার জেলায় একের পর এক হাওর ডুবে যাওয়ায় ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তলিয়ে কৃষকদের অপরিনীয় ক্ষতির কারনে দিশেহারা হয়ে পরেছে। এবার এক ফসলী এ বোরো ধানের চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষক পরিবার গুলোর চাষাবাদের গরু আর গোলা (ধান রাখার পাত্র) এখন শূন্য। এখন ছুটছে জীবন বাঁচাতে কাজের সন্ধানে চেনা জানা শহরে আবার কেই অচেনা শহরে। জেলার তাহিরপুর উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের জয়পুর,সাহেব নগড়,গোলাবাড়ি,ছিয়ারগাও,পন্ডুব,মারালা,চিলাইন তাহিরপুর সহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম গুলোতে এখনও পৌছায় নি সরকারী বেসরকারী কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা। এ কারনে চরম ক্ষোব প্রকাশ করছে ক্ষতিগ্রস্থরা। জানাযায়,জেলায় কৃষক পরিবার রয়েছে ৩লাখ ৩১হাজার ৩১৬টি এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২লাখ ৭৭হাজার ১৮৮টি। জেলায় কার্ডধারী জেলে পরিবার রয়েছে ৮৪হাজার ২৪টি। এবার হাওরে ও নদীতে মাছ মরে কমে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে ৪৪হাজার ৪৪৫ পরিবার। জেলে ও কৃষক মিলে ৩লাখ ২১হাজার ৬৩৩ পরিবার এবার খাবার সংকঠে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারের লোকজন বেশির ভাগেই এখন হাওরের পানি ব্যবহার করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্য্যালয় সুত্রে জানাযায়,অতি বৃষ্টি,বাঁধ ভেঙ্গে ও পাহাড়ী ঢলে ১লাখ ৯০হাজার হেক্টরের অধিক জমির আধা পাকা ও কাচাঁ বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ৩লাখের অধিক কৃষক পরিবার ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রানী সম্পদ কার্য্যালয় সুত্রে জানাযায়,ফসল হানির কারনে গবাধি পশু সল্প মূল্যে বিক্রি করায় ১৪কোটি টাকা,গো খাদ্য ৭৭কোটির অধিক,পোল্ট্রি খাদ্য ও ডিম উৎপাদনে ব্যাহত হওয়ায় ১৪কোটি টাকার বেশি ক্ষতির হয়েছে। সর্ব মোট ১১০কোটি টাকা। ক্ষতি গ্রস্থদের দালিকা তৈরী কাজ চলছে। সুনামগঞ্জ জেলা মৎস কার্য্যালয় সুত্রে জানাযায়,এবছর জেলার ১১টি উপজেলায় মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারী হিসাবে ৫০মেট্রিকটনের অধিক দেশিও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাওয়ায় এবার সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থদের সবাতর্œক সহযোগীতা করা হবে। কৃষক খেলু মিয়া,বাদল মিয়া,আতিক,সাদেক আলী,উত্তম পুরকায়স্থ,অপু তালুকদার সহ জেলার বিভিন্ন হাওরের কৃষকগন জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি বালির বাঁধ বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরে প্রবেশ করে কোটি কোটি টাকার কষ্টের সোনার ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ফসল ফলাতে আমরা বিভিন্ন এনজিও,ব্যাংক ও মহাজনের কাছ থেকে ঋন নিয়েছি। কিভাবে ঋন পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। সরকার প্রতি কেজি চাল ১৫টাকা ধরে ও প্রতি কেজি আটা ১৭টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। তা চাহিদার তুলনায় খুবেই কম প্রতিদিন খালি হাতে বাড়ি ফিরছে অনেকেই। ফেরদৌস আলম,সাদেক আলী,নিউটন রায় সহ বিভিন্ন হাওর পাড়ের দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোর ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা বলেন,সব খানে শুনি সরকারী-বেসরকারী লোক জন ত্রান দেয় হাওর পাড়ে আমরার কাছ ত আসে নাই। আর আমরা জেলা ও উপজেলা সদরে যাইতেও পারি না তাই পাই না। জেলা বা উপজেলা সদরে গেলে ১৫০-২০০শত টাকা খরচ হয়।
টাকা পাই কই আর কেমনেই বা যাই। ক্ষতি গ্রস্থ এই জেলা কে দূর্গত এলাকা ঘোষনা করা হউক। তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার জানান,সঠিক ভাবে ভিজিএফ কার্ড তৈরীতে একটু দেরী হওয়ায় ত্রান বিতরনে দেরী হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ সবাইকেই সহযোগীতা করা হবে। এখানে কাউকে স্বজন প্রীতি করা হবে না। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান,আমরা আমাদের স্বাধ্য মত ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত সহযোগীতা করছি। ক্ষতিগ্রস্থ সবাই ত্রানের আওতায় আনা হবে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের থাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোতে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ত্রান ও ওএমএস চালের বিতরনের হচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান,এবার যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের যাচাই বাচাই করে তাদের কাছে দ্রুত ত্রান পৌছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সুনামগঞ্জ জেলা কে দূর্গত এলাকা ঘোষনা করার দাবী জানাই।