সিলেটে জঙ্গিদের বোমা বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মুহাম্মদ আবু কায়সার (দীপু)-এর পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার বাড়ি ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের ছৈলা গ্রামে হলেও তাদের পরিবার সুনামগঞ্জ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। দিপুর জন্ম,শৈশব,যৌবন বেড়ে উঠা  এখানেই। কায়সারের বাবা  মরহুম আছদ্দর আলী চৌধুরী ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাতাদের একজন এবং সাবেক জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ৭১ সালে বংবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় ছিলেন সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজ্ঞ।  মা হাসনা চৌধুরী স্বর্ণগর্বা মা। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে কায়সার ছিলেন তৃতীয়। তারা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের ২০৪ নং হোল্ডিংয়ের নিলয় -২ নুতনপাড়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। আবু কায়সার ১৯৮৯ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন সিটিএসবি ও সিআইও ওয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন । তার মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যে সুনামগঞ্জ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা নুতনপাড়ার বাসভবনে ভিড় করেন। শনিবার রাত ১১ টায় কায়সারদের বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়  শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। নিহত কায়সারের চাচাতো ভাই চৌধুরী আহমদ মুজতবা রাজী জানান, মৃত্যুর খবর পেয়ে কায়সারের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট চৌধুরী মুহাম্মদ আবু সাহেদ বাবলু সহ প্রায় সকলে জড় হয়েছেন। তিনি বলেন,  ‘দীপুর (কায়সারের ডাক নাম)  ভাই আবু তারেক সাজু যুক্তরাজ্যে ও আরেক ভাই জাহেদ চৌধুরী অপু যুক্তরাষ্ট্রে এবং একঅমাত্র বোন ফ্রান্স পরিবার নিয়ে অবস্থান করায় দেশে আসতে পারেনি তবে টেলিফোনে তারা সবাই সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন।

দিপুর পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্টিত। প্রতিটি সন্তাকে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্টত করার জন্য দিপুর মাকে দেয়া স্বর্ণগর্বা মায়ের সম্মান। দীপু সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ছাত্র জীবনে তিনি ভালো ক্রিকেটার ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নিঃসন্তান । স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সিলেট শহরে থাকতেন।’

দীপুর জনৈক প্রতিবেশী বলেন, ‘তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে সুনামগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’ প্রতিবেশী এক বন্ধু বলেন, ‘দীপু ছিলেন মিশুক প্রকৃতির পুলিশ অফিসার ।

প্রসঙ্গত, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ী এলাকায় ‘আতিয়া মহল’ নামে পাঁচতলা একটি বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানতে পারে পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহল বাড়ির ভেতর থেকে বাইরের দিকে গ্রেনেড ছোড়া হয় বলে জানায় স্থানীয়রা। এরপর ‘আতিয়া মহল’ঘিরে রাখে পুলিশ। জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনার জন্য শুক্রবারা বিকেলে সোয়াট টিম ও রাত সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আর অভিযানে নেতৃত্ব দিতে রাত চারটার দিকে সিলেটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। শনিবার ভোরে আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করে সোয়াট ও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো বাহিনী।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn