জিয়াউর রহমান লিটন-

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন পরিষদের ৮ জন সদস্য। পরিষদের স্থায়ী কমপ্লেক্স ভবন থাকলেও নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস দাপ্তরিক সকল কার্যক্রম পৌর সদরের নিজ বাসায় বসেই পরিচালনা করে আসছেন। যার কারণে যথাযথা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী।  পরিষদের ৮ জন সদস্য চেয়ারম্যানের উপর অনাস্থা প্রস্তাব এনে বুধবার দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব ও  বিভাগীয় কমিশনার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগকারী পরিষদের সদস্যরা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য গোলাম রব্বানী, ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাশেদ মিয়া, ৭নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ ফরিদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিলন মিয়া ও সংরক্ষিত মহিলা(১,২)নম্বর সদস্য জাহানারা বেগম ।  অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ইউএনও তৌহিদুজ্জামান পাবেল বলেন- তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন তৈরী করে পরবর্তি পদক্ষেপ গ্রহণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়- চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)-২ এর আওতায় প্রাপ্ত ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৫ টাকা বরাদ্দ ওয়ার্ড সভা ছাড়া নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প উপজেলা দাখিল পূর্বক বিজিসিসি সভায় অনুমোদন করেন। ২০১৬-২০১৭ বছরে দু:স্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভোলাপমেন্ট- ভিজিডি কর্মসুচি চক্রের ২১০ জন উপকারভোগীর বাচাই এর জন্য ক্ষুদ্র/ওয়ার্ড কমিটির সভা ও অনুমোদন ছাড়া যথাযথ নীতিমালা অনুসরন না করে নিজের ইচ্ছামত স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে তালিকা প্রনয়ন করেন। এমনকি ইউপি ভিজিডি বাচাই কমিটির মতামতও নেয়া হয়নি। দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্ব ভাতার বরাদ্ধকৃত ৭৮জনের তালিকা পরিষদের মতামত ও পরিষদেও সভা ছাড়াই স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তালিকা প্রনয়ন করেন।  এডিপি খাতের  বরাদ্ধের কোন প্রকল্প  পরিষদেও কাছ থেকে না নিয়ে চেয়ারম্যান মন গড়ামত প্রকল্প করছেন। পরিষদের ট্যাক্স জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন,ব্যবসায় অনুমতিপত্র,হোল্ডিং কর ইত্যাদি খাতের কোন হিসেব পরিষদকে অবগত করেন না। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচীর আওতায় প্রাপ্ত ১৩৬ টি জবকার্ড পরিষদের মতামত ছাড়া  নিজের ইচ্ছামত অনিয়মভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচী টি আর,কাবিখা,কাবিটা খাতের বরাদ্ধ পরিষদেও মতামত ছাড়া চেয়ারম্যান তার ইচ্ছামাফিক প্রকল্প প্রনয়ন করে। বরাদ্ধের অর্ধেক ৫০ভাগ টাকা পরিষদেও সকল সদস্যদেও সোলার প্যানেল খাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তার কোন হদিস নেই। পরিষদের আসবাবপত্র চেয়ারম্যান তার বাড়িতে ব্যাক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন। সার ও বীজ  ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিতরন করার কথা থাকলেও পরিষদেও মতামত ছাড়া চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোক ও সাধারণ ব্যাক্তিদেও মধ্যে বিবরন করেন।  বয়স্ক ভাতা.বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বরাদ্ধের ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই। ফলে গরীব লোকজন ভাতা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি ও উন্নয়ন কমিটির মাসিক সভা নিয়মিত  হচ্ছে না। ফলে ইউনিয়নবাসী উন্নয়ন ও সঠিক তথ্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিষদের মতামত না নিয়ে কম্বল বিতরন ও রিলিফ সামগ্রীর বরাদ্ধ তাহার ইচ্ছা মাফিক বিতরণ করেন।  অভিযোগকারী সদস্যরা জানান, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ পরিষদেও সিদ্ধান্ত হয় এক রকম তিনি তা পরিবর্তন করে কার্যবিবরনী তৈরী করেন আরেক রকম এবং মাসিক সভার কার্যবিবরনী আমাদেরকে দেয়া হয় না ,এমনকি পরবর্তী সভায় পাঠ কওে শুনানো হয় না। সভার কর্মসুচী জানানো হয় একটা, আমাদেরকে গোপন রেখে অনেকটা কর্মসুচী কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। চেয়াম্যান আবদুল কুদ্দুসের এহেন কার্যকলাপে পরিষদের সদস্যগনসহ জনসাধারণের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছে, যে কোন সময় পরিষদের সদস্যসহ জনসাধারণের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে উল্লেখ করে অভিযোগকারীরা ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ লাগবে অনাস্থা প্রস্তাবসহ আনীত অভিযোগগুলো তদন্তপুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার আবেদন জানান। এছাড়াও চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ রক্ষা বাঁধের কাজে পাউবোর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রভাব খাটিয়ে বরাম হাওর রক্ষা বাধের ৩ টি  প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির(পিআইসি) সভাপতি নিজেই হয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে,বরাম হাওর উপ প্রকল্পের এই ৩ টি প্রকল্পে নাম মাত্র কাজ করে বরাদ্দেও কয়েক লাখ টাকা পাউবোর সাথে ভাগ ভাটোয়ারা করে হাতিয়ে নেন।

গ্রামবাসীর সুত্রে জানা গেছে- সন্তোষপুর গ্রামের পাশে বরাম হাওর উপ-প্রকল্পের পিআইসির সেক্রেটারী ইয়াছিন মিয়ার স্বাক্ষর জোরপুর্বক আদায় করে বরাদ্ধের ৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকার মধ্যে সিংভাগ টাকা তিনি হাতিয়ে নেন। এই প্রকল্পে পিআইসির সভাপতি ইউপি সদস্য মিলন মিয়াকে অবৈধভাবে সরিয়ে চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ নিজেই প্রকল্প কমিটির সভাপতির পদে আসীন হন। বাঁধের কাজ সময়মত সঠিকভাবে কাজ না করায় জনরোষে পড়ে নাজেহাল হন ওই চেয়ারম্যান।  এ ব্যাপারে তাড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ বলেন- আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। এর কোন ভিত্তি নেই, তবে আমার ওয়ার্ডে গরীব লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভিজিডি কার্ড একটু বেশি দিয়েছি। তিনি বলেন, বাঁধের একটি টাকাও আমি খাইনি,এতে আমার লস হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn