দিরাইয়ে ভিজিএফ বিতরণে ওজনে কম দেয়া ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
দিরাইয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারী ত্রাণ ভিজিএফ বিতরণে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত রোববার উপজেলার ভাটিপাড়া ইউপির তালিকাভুক্ত উপকারভোগিদের মাঝে ভিজিএফ এর চাল ও নগদ টাকা বিতরণকালে এই অভিযোগ করা হয়। মাথাপিছু ৩০ কেজি চালের মধ্যে ২২/২৩ কেজি করে চাল দেয়ায় তাদের এই অভিযোগ। তাছাড়া শুরুতেই ভাটিপাড়া ইউপির ভিজিএফ এর তালিকা নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ করেন একজন ইউপি সদস্যা। ১ম কিস্তি ভিজিএফ বিতরণকালে এসব অভিযোগে ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বিক্ষুব্ধদের হামলার শিকার হন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একের পর এক এসব অভিযোগ করলেও অনিয়মের সাথে সরকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকায় কোন প্রতিকার হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। রোববার সরেজমিনে ভাটিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভিজিএফ বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী একজন (ট্যাগ) কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করার কথা থাকলে ও সেখানে কোন ট্যাগ অফিসার নেই।
৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা একজন উপকারভোগী বলেন, আগের বেলা (প্রথম কিস্তি) ৩৮ কেজির জায়গায় ২৮ কেজি চাউল পাইছিলাম আজ (রোববার) ৩০ কেজির মাঝে ২২ কেজি দিছে। তবে ভাই আমার নামটা পত্রিকায় দিয়েননা; পরের বেলা মেম্বারে আমার নাম তালিকা থেকে কাইটা দিব। এসময় জয়দর আলী নামে একজন বলেন প্রথমবার আমার স্ত্রীর নামে কার্ড দিছিলও এইবার ছালেকনুর মেম্বার সবার কাছ থেকে ১শ করে টাকা নিছে আমরা টাকা না দেয়ায় নাম বাদ দিয়া দিছে। ১ নং ওয়ার্ডের ইসলামপুরের অসুস্থ ফিরোজ আলীর নামের চাল নিতে আসা স্ত্রী রফিকুন্নেছা বলেন আমার স্বামীর নামের চাউল নিতেছি। আমার চাউল পাশের দোকানে (ফাহমিদা এন্টারপ্রাইজ ভাটিপাড়া বাজার) ডিজিটাল পাল্লায় তুলে দেখা যায় ২৩.৩২ কেজি হইছে। আমরা গরীব মানুষেরে কেন চাউল কম দেয় বুঝিনা, কিছু বললে তারা কয় নাম কাটি দিব আর দিতনা।
ভিজিএফের চাল কম দেয়ার বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে একই দোকানে ৩নং ওয়ার্ডেও মৃত আছকির আলীর স্ত্রী মিনা বেগমের চাউলের বস্তা ইউপি সদস্য রাছিন চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওজন দিলে দেখা যায়, ৩০ কেজি চালের জায়গায় ২২.৯০ কেজি চাল রয়েছে। একজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৫ শ টি কার্ডেও মাঝে ১৫০ টি কার্ড চেয়ারম্যান নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। ইউএনও এবং পিআইও অফিস ম্যানেজ করে সেই তালিকায় চেয়ারম্যান সাহেব নিজের নাম ছাড়া তার পরিবারের সবার নাম দিয়ে ভিজিএফ এর চাল ও নগদ টাকা আত্মসাৎ করছেন। তালিকায় ১৩৭৭-১৩৯৬ ক্রমিকে সবাই চেয়ারম্যানের পরিবারের লোক। আপন ভাই মিনার আলম যিনি সুনামগঞ্জ শহরে বাসা করে থাকেন, এবং কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। তাছাড়া চাচাতো ভাই সাকবর কাজী ও তার স্ত্রী রেবিনার নাম ও রয়েছে তালিকায়।
একইভাবে একজন মহিলা সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী সরকারী দল ও প্রভাবশালী পরিবারের লোক হওয়ায় ভয়ে কেউ অভিযোগ করে না। এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান কাজী বলেন, প্রতিবার উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে ভাটিপড়ায় ভিজিএফের চাল আনতে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়, এজন্য ইউএনও ও পিআইও সাহেবের সাথে আলাপ করে প্রতি কার্ডে ২৮ কেজি করে দেয়া হয়। আমার পরিবারের ক্ষতিগ্রস্তদের নাম দেয়া কি দোষ নাকি। দিরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হাই খান বলেন, ভিজিএফের চাল কোন অবস্থাতেই ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে বিতরণ করা যায়না। ভাটিপাড়া চেয়ারম্যান শনিবার চাল বিতরণ করেছেন সেখানে আমার অফিসের বিদ্যুৎ বাবু ছিল। রোববার ২২/২৩ কেজি করে বিতরণ করার বিষয়টি শুনেছি। দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান পাবেলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।