জিয়াউর রহমান লিটন :

দিরাই ও শাল্লার হাওরে হাওরে নির্বিঘ্নে চলছে পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব। দুই উপজেলার  ছায়ার হাওর, ভান্ডা, বরাম, কালিয়া কোটা, উদগল, চাপতি ও টাংনির হাওর সহ বৃহৎ এই সাতটি হাওরে প্রায় সহস্রাধিক নৌকা নিয়ে  হাওর পাড়ের ফসলহারা দরিদ্র কৃষক ও জেলেরা  প্রতিদিন পোনা মাছ শিকারে নামছে। প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরকার হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে পোনা মাছ অবমুক্ত করলেও ‘মাছের পোনা দেশের সোনা’ এ শ্লোগান কোন কাজে আসছে না। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের উদাসীনতার কারনে একদিকে পোনা মাছ অবমুক্ত করার পর অন্যদিকে তা শিকার করা হচ্ছে এবং অবাধে তা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা গেছে- প্রতিটি  কোনাজাল দিয়ে কমপক্ষে ২ থেকে ৩মণ মাছ শিকার করা হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিদিন দিরাই ও শাল্লার বৃহৎ সাত টি হাওর থেকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টন মাছ শিকার করা হচ্ছে। এবং তা গ্রামে ও স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। হাওরপাড়ের সচেতন লোকজন বলছেন, অন্তত পক্ষে জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় এই দুই মাস মাছের পোনা শিকার বন্ধ করা গেলে মৎস্য সম্পদে ভরপুর হয়ে যেতো হাওরাঞ্চল, লাঘব হত সকল অভাব অনটন।

স্থানীয়রা জানান- নিষিদ্ধ কোনা জাল ও দড়া জাল নিয়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত  আবার ভোর থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত পালাকরে চলে পোনা মাছ শিকার। একেকটি কোনা জালের সাথে ৬-৮ জন লোক  ও দড়াজালে ৪ জন করে দল গঠন করে হাওরে হাওরে পোনা মাছ শিকারে নামতে দেখা যায়। শুধু জেলে পরিবারের লোকজন নয় হাওরের ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষককুল পেটের তাগিদে জাল দড়ি নৌকা নিয়ে হাওরে নামছেন, বিকল্প কোন কাজ না থাকায়  পোনা মাছ শিকার ও তা বাজারে বিক্রি করে সংসারের খাবার ও খরচের জোগান দিচ্ছেন। তবে জেলারা বলছে, জীবীকার তাগিদে কোন উপায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দল গঠন করে বাধ্য হয়ে হাওরে  মাছ শিকারে নামছেন তারা।

জেলেদের অভিযোগ হাওরাঞ্চলে কোটি টাকার জলমহাল মৎস্য সমবায় সমিতির নামে কাগজে-কলমে ইজারা প্রাপ্ত হলেও প্রভাব খাটিয়ে এসব জলমহাল ওয়াটার লর্ডরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলেএসব জলমহালে তাদের গতর কাটানো ছাড়া কোন অধিকার থাকছে না। নাচনী গ্রামের মৎস্যজীবী আমির উদ্দিন বলেন- জলমহালে শতভাগ অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন সবধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এবার দুর্যোগে সর্বহারা লোকজন জীবন বাচঁতে কোন অবলম্বন না থাকায় মাছ শিকারে নামছেন।

পৌরসভার বাসিন্দা প্রদীপ দে বলেন- পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে মাছের পোনা বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্টদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি, এসব পোনা মাছ শিকার,বিক্রি ও ক্রয় নিষিদ্ধ হলেও কেউ তা তোয়াক্কা করছেন না,  জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় এ দুমাস এই পোনা মাছ শিকার বন্ধ রাখলে মৎস্য সম্পদ হাওরের সকল অভাব লাঘবে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারতো।

কাশীপুর গ্রামের সাকিল মিয়া জানান- জেলেরা অবাধে পোনামাছ মেরে দেশের সম্পদ নষ্ঠ করছে, কোনা জালের একেকটানে তিন থেকে চার মন মিরকা,ঘনিয়া,বোয়াল,কইলাসহ পোনা মাছ শিকার করছে। তার দাবী অবাধে নিষিদ্ধ কোনাজাল ও কান্টেজাল বিক্রি বন্ধ হলে পোনা মাছ শিকারও বন্ধ হবে।

ভাটিবাংলা মৎস্য খামারের পরিচালক প্রশান্ত সাগর দাস বলেন- হাওর দুর্যোগে শুধু ফসলহারা কৃষকরাই দিশেহারা নন, হাওরপাড়ের জেলে সম্প্রদায়সহ সকল ধরনের লোকজন মহাসংকটে পড়েছেন,  অনেকে বিকল্প কোন জীবীকা না পেয়ে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে দেশের সম্পদ নিষিদ্ধ পোনা মাছ শিকারে নেমেছেন, এ ব্যাপারে সরকারের যুগোপোযোগী পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত জেলেদের কে ৩ মাসের জন্য রেশনের আওতায় নিয়ে পোনা মাছ নিধন বন্ধে বাধ্য করা যেতে পারে। মাছের পোনা দেশের সোনা এ শ্লোগানকে কার্যকর করতে হলে সকলকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে আসতে হবে।

দিরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন- ইতিমধ্যে পোনা মাছ না ধরতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলেদের নিয়ে সভা করা হয়েছে, তবুও কোন কোন জায়গায় রাত জেগে পোনা মাছ শিকার করা হচ্ছে, আমরা আর কি করতে পারি আপনারাই বলেন, কি করতে পারিআপনারা পরামর্শ দেন, মৎস্য বিভাগের মাঠ সহকারীরা তদারকির কাজ করছেন, পোনা মাছ নিধন বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn