দিরাই-শাল্লায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি তলিয়ে গেছে
দিরাই ও শাল্লায় গত দুই দিনের ব্যবধানে বাঁধ ভেঙ্গে ও ডোবরার পানিতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে দুই উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি। একে একে হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসলী জমি ডুবলেও ফসল রক্ষা বাধের দায়িত্বে নিয়োজিত পাউবো’র কর্মকর্তরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। চোখের সামনে ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে হাওর পাড়ের কৃষকরা বিলাপ করছেন। অসময়ে হাওরে পানি প্রবেশের ঘটনায় পাউবো’র মৌসুমী বাণিজ্যকেই দায়ী করছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা।
কৃষকরা জানান- রবিবার দিরাই উপজেলার টাংনির হাওরের বাদালিয়ার বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে হাওরের ৩৩শ’ হেক্টরের মধ্যে অধিকাংশ ফসল তলিয়ে গেছে। অপর দিকে বরাম হাওরের তুফানকালী বাঁধ ভেঙ্গে আড়াই হাজার হেক্টর ও বৈশাখী বাঁধ ভেঙ্গে এক হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এই বাঁধে দুইদিন কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রাণপন চেষ্ঠা করেও তা রক্ষা করতে পারেনি। তবে উপজেলা কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা রণধীর রায় জানান- এখন পর্যন্ত তিনটি বাঁধ ভেঙ্গে ৬ হাজার ৭শ হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এদিকে, শাল্লা উপজেলায় ছব্বিশা হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে ৫শ’ হেক্টর ফসলী জমি তলিয়ে গেলেও ৪০ ভাগ ফসল ডোবরার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। অকালে ফসলী জমি পানিতে ডুবার ঘটনায় পাউবো’র মৌসুমী বাণিজ্যকেই দায়ী করছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। তারা বলছেন- পাহাড়ী ঢলে নয়, যথা সময়ে যথাযথ ভাবে বাঁধের কাজ না করায় অসময়ে তলিয়ে গেছে হাওরের ফসলী জমি।
ভরাম হাওরের কৃষক মুসলেহ উদ্দীন, চাপতি হাওরের কৃষক সবুজ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাকালে তারা জানান- পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পাউবোর মৌসুমী বাণিজ্যের কারণে পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যার হাত থেকে কখনও ফসল রক্ষা করতে পারেনি। এবারও তারা বাঁধের কাজ যথা সময়ে সম্পন্ন না করেই এ দুর্যোগের সময়ও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সময় মত কেউ বাঁধের কাজের কোন খোঁজখবরও রাখেন নি। এখন পানি ঢুকছে পরিদর্শনও বাড়ছে। স্থানীয় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রানপন চেষ্টা করেও উপজেলার বাদালিয়া, বৈশাখী বাঁধ ও তুফানকালী বাঁধ রক্ষা করতে পারেনি।
তবে বাঁধে থাকা নিরুপায় কৃষকদের অভিযোগ- সময়মত সরকারদলীয় লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা যদি সঠিকভাবে কাজের তদারকি করতেন তা হলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হত না। বাঁধের নামে বাঁধ বাণিজ্যের স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষকরা বলেন- চাপতি হাওরে বৈশাখী, বরাম হাওরের তুপানখালী ও কডাইকালী এবং টাংনী হাওরের বাদালিয়া বাঁধ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পবাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) লোকজন সামান্য টাকায় সাবলীজ দিয়ে বরাদ্ধের সিংহ ভাগ টাকা তারা ভাগ বাটোয়ারা করে হাতিয়ে নেন। টাংনি হাওর উপ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট টিকাদার কোন কাজই করেননি বলে অভিযোগ কৃষকদের। বরাম হাওর উপ প্রকল্পের তুফান খালী বাধের দুটি অংশে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও পিআইসির সভাপতি ইউপি সদস্য লাল মিয়া মাত্র ৩ লাখ টাকায় তারই চাচাতো ভাই ওয়ারিদ মিয়াকে সাবলীজ দিয়ে দেন। চাপতি হাওর উপ প্রকল্পের বৈশাখী বাঁধের বরাদ্ধ প্রায় ১৫ লাখ টাকা হলেও পিআইসি’র সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সামান্য টাকায় জালালপুর গ্রামের মতশ্বির মিয়াকে সাবলীজ দিয়ে দেন, একইভাবে বরাম হাওর উপ প্রকল্পের কডাইখালী বাধের বরাদ্ধ প্রায় ১৫ লাখ টাকা থাকলেও পিআইসি ইউপি সদস্য শিমুল মিয়া সাবলীজ দেয় মতশ্বির মিয়াকে। সাব লীজ বাণিজ্যের কারনে এই বাঁধগুলোতে বরাদ্ধের দশ ভাগের এক ভাগ টাকার কাজও হয়নি। সাব লীজকৃত বাঁধগুলো ভেঙ্গেই হাওরে পানি ঢুকেছে বলে কৃষকরা জানান। বাঁধ বাণিজ্যের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন কৃষকরা। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নয়, নদী খনন জরুরী। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন নামমাত্র বাঁধের কাজ করে তাদের মৌসুমী বাণিজ্য জমিয়ে তুলতে চান। প্রতি বছর সরকারের কোটি টাকা হাওরের ফসল রক্ষায় নয়, কিছু লোকের পকেট ভারি করছে।
শাল্লা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অবনি মোহন দাস বলেন, পাহাড়ী ঢল নয় টিকাদারি সিন্ডিকেট ও প্রজেক্টের মাধ্যমে যথা সময়ে যথাযথভাবে বাঁধের কাজ না করায় পানি ডুকছে, ছব্বিশা হাওরে পানি ডুকছে, শাল্লায় ৪০ভাগ ফসল ডোবরায় তলিয়ে গেছে, শ্রাহাইলে জোয়াইরা হাওরের দেড় কিলোমিটার বাঁধে এখনো কাজ হয়নি, আটগাও ইউনিয়নে বেরী বাঁধের কাজ করা হয়েছে এসকেভেটর মেশিন দিয়ে, বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধকে ঝুকি পুর্ন করে তোলায় বাঁধ টিকে থাকতে পারে না। হাওর রক্ষা বাঁধ নিয়ে পাউবোর ও সংশ্লিষ্টদের মৌসুমী বাণিজ্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।