দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক বৈঠকের কৃতিত্ব নিল ট্রাম্প!
উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে যখন ঐতিহাসিক বৈঠক হচ্ছে – তখন একটা প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন – এটা যে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো – তার কৃতিত্ব আসলে কার? কেউ কেউ দাবি করছেন, দুই কোরিয়ার মধ্যকার শান্তি আলোচনার কৃতিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই প্রাপ্য। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু নিজে কৃতিত্ব না নিয়ে তা ভাগ করে দিয়েছেন যুক্তরাস্ট্রের মানুষকে এবং তার ভালো বন্ধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে। এর জবাবে অনেকে বলছেন, এই আলোচনায় আসলে কি প্রভাব ফেলেছে, তা শুধু ঐতিহাসিক দলিলপত্র থেকেই প্রতীয়মান হবে, তবে তথ্যপ্রমাণ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তরের সাথে আলোচনাকে উৎসাহিত করেছিল, আর এর সাথে ছিল চীনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার চাপ। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে কোরিয়া উপদ্বীপে পরিবর্তনের আভাসের কৃতিত্ব নেবার আভাস দেন অনেক আগেই। এ বছরই জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, ‘ব্যর্থ ‘বিশেষজ্ঞ’-রা এ নিয়ে নানা কথা বলছে। কিন্তু আমি যদি শক্ত অবস্থান না নিতাম এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ না করতাম – তাহলে এ সংলাপ-আলোচনা হতো এমন কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনও এ কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, যে উত্তরের সাথে এই শান্তি আলোচনা হবার পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে বড় কৃতিত্ব পাওনা আছে। তার কথায় ‘মার্কিন-নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও চাপের ফলেই’ এটা সম্ভব হয়েছে। এ বছরই মে বা জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আনের বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে – যা হবে উত্তর কোরিয়ার কোন নেতার সাথে ক্ষমতাসীন কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বৈঠক। হয়তো এ আলোচনা কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা কমিয়ে আনবে, ৬৮ বছরের পুরোনো কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একটি শান্তি চুক্তিও হতে পারে। তার পর থেকে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর বহু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে – যার অনেকগুলোই মার্কিন প্রস্তাবে। এর পর দিন দিন এসব নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে। কিন্তু যা উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে তা হলো চীনের অবস্থান পরিবর্তন – কারণ উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় চীনের সাথে।
এর আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো চীন খুব কমই প্রয়োগ করতো। কিন্তু গত বছর থেকে চীন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে শুরু করে বলে মনে করা হয়। এবছর ২রা জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেন, কিম জং উন যে তার ডেস্কে সর্বক্ষণ পারমাণবিক বোতাম থাকার কথা বলেন, এই খেতে-না পাওয়া দেশটির শাসককে কি কেউ জানিয়ে দেবেন যে আমারও একটা পারমাণবিক বোতাম আছে যা আরো অনেক বড়, আরো ক্ষমতাশালী।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সময় এবার শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার ক্রীড়াবিদদের আসা এবং এক পতাকার নিচে প্যারেড করাটা ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এরপর উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উন চীন সফরে গিয়ে চীনের মনোভাব বুঝে আসেন। এ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভার্জিনি গ্রেলচিক বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়া কৌশলগতভাবে কাজ করেছে।
তারা আমেরিকানদের একটা সংলাপের জাগায় আনতে চেয়েছে, কারণ দুই কোরিয়ায় একটা পর্যায়ে আমেরিকার নীতি দেখে কিছুটা ধাঁধায় পড়ে গেছে এবং উদ্বিগ্ন বোধ করেছে। অবশেষে আজ সাকলে যখন দুই কোরিয়ার নেতা ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন তখন ট্রাম্প সূদুর অমেরিকায় বসে নিশ্চয়ই সফলতার হাসি হাসছিলেন। ট্রাম্প টুইটে লেখেন, মিসাইল উৎক্ষেপনের বহু বছরের পর অবশেষে দুই কোরিয়ার নেতারা ঐতিহাসিক বৈঠকে বসেছেন। ভালো কিছুই হচ্ছে, সেটা শুধু সময়ই বলে দেবে। খানিকবাদে ট্রাম্প আবারো টুইট করে বলেন, কোরিয়ান যুদ্ধ শেষ! কোরিয়ায় এখন যেটা হচ্ছে তা দেখে যুক্তরাষ্ট্র ও এর সকল মানুষ খুবই গর্বিত হতে পারে।
অবশ্য এর খানিকবাদেই এই অসম্ভব সম্ভবের পেছনের আরেক ব্যক্তির কথা মনে পড়ে ট্রাম্পের। তিনি আর কেউ নন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ট্রাম্প শি কে ভালো বন্ধু আখ্য দিয়ে টুইট করে বলেন, দয়াকরে আপনারা আমার খুব ভালো বন্ধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে যে অবদান রেখেছে সেটা ভুলে যাবেন না। তিনি ছাড়া এটা হয়ত আরো বেশি দীর্ঘায়িত ও কঠিন প্রক্রিয়া হত।