দুই দলের সামনে যত চ্যালেঞ্জ
বিদায়ী বছর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বহাল রেখেই নতুন বছরে পা দিয়েছে সরকার। নতুন বছরে সরকারের জন্য ভোটযুদ্ধই বড় চ্যালেঞ্জ। সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন শুধু বর্তমান সরকারেরই অঙ্গিকার নয়, পাশাপাশি দেশের জনগণেরও প্রত্যাশা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল বরাবর চেয়ে আসছে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনেই শুভবার্তা দিয়েছেন বিএনপিকে, দেশবাসীকে। সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অমানিশা ততই কেটে যাবে। কেটে যাবে বিএনপির সব ভয়। ওবায়দুল কাদের রাজনীতিতে সব সময় ইতিবাচক কথাই বলে আসছেন। তিনি যে অমানিশার কথা বলছেন, সেটি শুধু বিএনপির নয় গোটা দেশের মানুষের মধ্যেও রয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল সেই অমানিশার আশংকা বরাবরই ব্যক্ত করে আসছেন। বিএনপি থেকে তো সব পর্যায়ের নেতারা বিগত বছরজুড়ে নিরন্তর বলেছেন, সরকার বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেই নয় তার দলকেও ভোটের বাইরে রাখতে চায়। যদিও প্রধানমন্ত্রী থেকে সরকারের মন্ত্রী নেতারা বলে আসছেন আগামী নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ। এমনকি সরকারি দল অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ, নির্বাচন উপযোগী শক্তিশালী প্রার্থী দিতে গিয়ে অনেককে চোখ বন্ধ করে বাদ দিচ্ছে।
দলের হাই কমান্ড থেকে বিদায়ী বছরের শেষ লগ্নে এসেও বলা হয়েছে, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় যিনি উঠে আসবেন তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। বছরের শুরুতেই সরকারি দল ব্যাপক জনসংযোগ, সভা সমাবেশের কর্মসূচী নিয়েছে। তৃণমূলকেও কর্মসূচীভিত্তিক সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক চিঠি দিয়েছেন। আগামী ২ মাসেরই মধ্যে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় হচ্ছে। এই রায় ঘিরেই যত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সরকার ও বিরোধী দলের বক্তব্যে এই ধারণা জন্মেছে যে, পর্যবেক্ষক মহলের মতে খালেদা জিয়া দণ্ডিত হচ্ছেন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন। যদিও সরকারের অভ্যন্তরে কারো কারো নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী বাইরে রাখার ক্ষেত্রে দ্বিমত রয়েছে। এমন কিছু করতে তারা নারাজ যাতে করে বিএনপি ও তার নেত্রী সস্তা জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে আগামী নির্বাচনে সরকারি দলের জন্য শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে।
ওবায়দুল কাদের আশার আলো দেখালেও রহস্য খোলাসা করেননি। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক সংস্কৃতির অন্দরমহলে সরকার ও বিরোধীদলের রহস্যময়তাই আকর্ষণ ও কৌতুহল। সরকারের তরফ থেকে সংবিধান থেকে যে একচুল নড়বেন না, সেই কথা তারা শুধু বলার জন্যই বলছেন না, সিদ্ধান্ত থেকেই বলছেন। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অন্তর্বতী সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ডেডলাইন ডিসেম্বর ঘিরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সকল রাজনৈতিক শক্তি ও মানুষের মধ্যে প্রস্তুতি চলছে। চলছে রাজনীতিবিদদের নানামুখী রণকৌশল নির্ধারণ। বিদায়ী বছরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন নতুন বছর হবে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির বছর। ইঙ্গিত করেছেন ব্যালট বিপ্লবে জয়ী হবার। বিএনপি যতই বলুক শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার ভোট লড়াই থেকে কোনোভাবেই দলটি দূরে থাকছে না। কেবল নিবন্ধন বাতিল হবে এই ভয়েই নয়, বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্যই নয়; তারা মনে করেন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই ফলাফল ঘরে তুলবেন। কারণ জনমত তাদের অনুকূলে। অন্যদিকে সরকারি দল মনে করে শেখ হাসিনার ইমেজ, তার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ ইস্যু ঘিরেই আবার ক্ষমতায় ফিরবেন তারা। পর্যবেক্ষকরা আরো মনে করেন, নির্দ্বলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চাপ দিয়ে বিএনপি মূলত দমন পীড়ন থেকে মুক্ত হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবার সুষ্ঠু পরিবেশ চায়। ভোটের লড়াইয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চায়। এতকিছুর পরও দুই দলের জন্য এই বছর চ্যালেঞ্জের বছর। কারো ক্ষমতা ফেরার, রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার, কারো জন্য ক্ষমতায় থাকার।