ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হওয়া সময়ের ব্যাপার বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এই চুক্তি না হলেও একটি দৃষ্টিগ্রাহ্য অগ্রগতি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যথা শীঘ্রই সম্ভব ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী চুক্তি ডেফিনেটলি করা হবে।’ রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে এক সেমিনারে এ কথা বলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী। ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ (খসড়া)’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে টাস্কফোর্স অব ওয়াটার, আইইবি।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলেই্। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মীমাংসা হয়েছে জলসীমানার দ্বন্দ্বেরও। তবে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি আটকে আছে বহু বছর ধরেই্। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফরে এই চুক্তি হওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে যায় এই চুক্তি। আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফরকে সামনে রেখে আবারও আলোচনায় এসেছে প্রসঙ্গটি।

পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তাচুক্তি নিয়ে ভারতের দুই জন প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। অবশ্যই তিস্তা চুক্তি হবে। বাংলাদেশ সরকার তিস্তার পানির জন্য নদী রক্ষার জন্য ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী চুক্তি বাস্তবায়ন করবে।’ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাপ্যতা বাড়ানো সম্ভব উল্লেখ করে পানিমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কথা দিয়েছেন। ভারতেরও পানির প্রয়োজন, আমাদেরও পানির প্রয়োজন। আমাদের পানির প্রাপ্যতার ব্যাপারে আরও মনোযোগী হবো। দেশের জন্য যেটা ভালো হবে সেটাই করা হবে।’

পানির সমস্যা সামাধান একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘একেক জায়গায় একেকে সমস্যা তার সমাধানও ভিন্ন ভিন্ন। শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে পানি পাচ্ছি না, দক্ষিণাঞ্চলে পানি পাচ্ছি। হাওরে চার মাসে পানি পাই ৮০ ভাগ, আট মাসে পানি পাই মাত্র ২০ ভাগ। এই সমস্যার সোজা সমাধান নেই।’

পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হবে বলেও জানান পানিসম্পদমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গঙ্গা ব্যারেজের পানি এক চতুর্থাংশ ভারতে জমা হবে। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে খুব শীঘ্রই একটা সিদ্ধান্ত হবে।’

সেমিনারে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর প্রবাহ ঠিক রেখে খাল-নদী উদ্ধার করতে হবে। এই নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারি। নদীগুলির ড্রেজিং যদি সঠিকভাবে করতে পারি তবে গ্রামের খাল বিল অসংখ্য পুকুর আছে সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে বাঙালির পানি সমস্যা আর থাকবে না।’

গঙ্গা ব্যারেজ জিডিপিতে অবদান রাখবে উল্লেখ করে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গঙ্গা ব্যাজের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে যখন মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়বে। তখন কৃষকরা তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারবে।’ এই ব্যারেজ হলে দেশের জিডিপিতে ১.৮ থেকে ২ শতাংশ যোগ হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে ২৩টি জেলার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn