দুদকের মামলায় পাউবোর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীর জামিন নামঞ্জুর
সুনামগঞ্জে হাওরে ফসলহানির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ূন মনজুর চৌধুরী ও হাসান মাহবুব সাদী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো.আইনুল ইসলাম বাবলু ও পরিতোষ চন্দ্র দাশ। মো.আইনুল ইসলাম বাবলু জানান, জেলহাজতে থাকা মো. আফছার উদ্দিনের পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেছিলেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। সুনামগঞ্জের হাওরের হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনায় পাউবোর কর্মকর্তা, ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) ৬১ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় দুদকের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয় ২ জুলাই। ওই দিন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, এ ঘটনায় পাউবোর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন এবং মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ। মামলার পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, ঠিকাদারদের সঙ্গে অবৈধ যোগসাজশের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে কাজ শেষ না করে কৃষকদের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। হাওরে ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর দুদক গত ১৩ এপ্রিল হাওরের ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের তদন্তে দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এরপর ১৫ এপ্রিল পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিনকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফসলহানির ঘটনায় ৩০ মে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২ মে পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) মো. আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামলায় এই তিন প্রকৌশলীকেও আসামি করা হয়েছে। পাউবোর যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সুনামগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস এবং সুনামগঞ্জের আরেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খলিলুর রহমান। জেলা প্রশাসনে হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে এবার ১৫৪টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার। তবে স্থানীয় কৃষক-জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হাওরের ৯০ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।