দুদকে ১০০ জনের তালিকা বিপাকে হাওরসম্রাট
সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে সোমবার দুটি মামলা করছে সংস্থাটি। মামলা দুটির অনুমোদন হয় মঙ্গলবার। দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, শুরুতে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলেও তালিকা এখন অনেক বড়। যাতে এখন প্রায় ১০০ জনের নাম উঠে এসেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, ক্যাসিনোকান্ডে যাদেরই নাম এসেছে সবাই অনুসন্ধানের আওতায় আসবেন। রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মচারীসহ যারা জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমপি রতনেরও নাম এসেছে ক্যাসিনোকান্ডেই। মূলত ক্যাসিনো-কান্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান তালিকায় নাম এসেছে তার।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন হাওর এলাকায় দাপুটে এক নাম। হাওর এলাকায় সম্রাটের মতোই দাপট তার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। অভিযোগ, দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্যভান্ডারসহ হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ জলমহাল, পাথর কোয়ারি, শুল্ক স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ তার ও তার অনুসারীদের হাতে। আয় হয় কোটি কোটি টাকা। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাও তার আয়ের একটি উৎস ছিলো বলে গুঞ্জন রয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী এবং হাওর এলাকার লোকজন এমপি রতনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রতনের অনুসারীরা জামালগঞ্জ উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টি ও জেলা ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অজিত রায়কে মারধর করেন। দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককেও মারধর করেন এমপি রতনের লোকজন। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামিমা শাহরিয়ারও (যিনি বর্তমানে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য) লাঞ্ছিত হয়েছিলেন রতনবাহিনীর হাতে।
সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওদা গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের। মৃত আবদুর রশীদ ওরফে দারোগা আলীর চার ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে রতন দ্বিতীয়। ১৯৮৮ সালে বাদশাগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। পরে অবশ্য তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন। কর্মমুখী শিক্ষার জন্য তিনি সিলেট পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। ১৯৯৩ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং (পাওয়ার টেকনোলজি) পরীক্ষা পাস করেন দ্বিতীয় বিভাগে। পরে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বিআরটিএর টেলিফোন বিভাগে কিছুদিন চাকরি করেন। অভিযোগ রয়েছে তখন থেকেই তিনি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। হাতে আসে কাঁচা টাকা। স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দলের সুযোগে এক সময় আওয়ামী রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপিও নির্বাচিত হন। অভিযোগ এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন রতন। রাতারাতি অনেক টাকার মালিক বনে যান, বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করেন বিলাসবহুল দালানকোঠা। এক সময়ের তার টিনের ঘর এখন বাহারি দালানে রূপ পেয়েছে।