দেশের মানুষ কষ্ট পেলে আমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে: প্রধানমন্ত্রী
বার্তা ডেস্ক :: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বারবার আঘাত আসা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ কখনও ভেঙে পড়েনি। আঘাতটা যে শুধু পাকিস্তান আমলে হয়েছে তা নয়, ৭৫’এ জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত দলটিকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে। আওয়ামী লীগকে হীরা টুকরার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, হীরা যত কাটা হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের ওপর যত বেশি আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের মানুষের জন্য কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা। এসব আছে বলেই আওয়ামী লীগ ৭০ বছর ধরে টিকে আছে। সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সভামঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরেন এবং সাজেদা চৌধুরীও আওয়ামী লীগ সভাপতির কপালে বাৎসল্যের চুমু দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় ঐতিহাসিক আওয়ামী লীগের অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করেন। দেশের মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসা নির্মম অত্যাচারের বর্ণনা তুলে ধরে আবেগাপ্লুত বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে উদাত্ত আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হলো তারপর যারা এ দলটিকে ধরে রেখেছিল, তাদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন হলো সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু যতই এ দলটাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
স্বাধীনতার পরও বারবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় গুণ হলো দেশের মানুষের প্রতি দলটির কর্তব্যবোধ-দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এত ত্যাগ-তিতিক্ষা করেছে বলেই এ দলটি ৭০ বছর টিকে আছে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আবারও সেই পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার সইতে হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একাত্তরে যেমন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লক্ষ্য ছিল গ্রামগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া। প্রত্যেকের ওপর আঘাত এসেছে। দেশ যখন স্বাধীন হলো পঁচাত্তরের পর আবারও সেই একই আঘাত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জীবনে নেমে আসল। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পরপরই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে জানা যায়, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, তিনি অত্যাচার-নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। আওয়ামী লীগের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি দেখেন দেখবেন কত আত্মত্যাগ। আমার মনে হয় না কোনো রাজনৈতিক দল কোনো দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এত আত্মত্যাগ করেছে কিনা?
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যে সীমাহীন অত্যাচার করা হয়েছে। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসল। তার আগে তো ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। যখন কোথাও ইমারজেন্সি আসে, কী হয়? তার ইমিডিয়েট পাস্ট অর্থাৎ তার আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের ওপর আঘাত আসে। কিন্তু আসল আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি যখন জোর করে দেশে আসলাম, আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলো। শেখ হাসিনা বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা স্বাধীনতা হারিয়েছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে। এই মীরজাফর তো গালিতেই পরিণত হয়েছে। এরপর দুইশ বছর ব্রিটিশ বেনিয়ারা শাসন করেছে এই ভ‚খণ্ড। দুইশ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই দুইশ বছর আগে হারিয়ে ফেলা স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে আওয়ামী লীগই আবার ফিরিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ এবং অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। এছাড়াও সভা মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সৌজন্যে : যুগান্তর