দোয়ারাবাজার  ::  দোয়ারাবাজার গ্রামের পূর্ব পাশে অবস্থিত হাওরের পানির ছড়া বন্ধ করে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে বিল (জলমহাল)। এই জলমহালের পশ্চিম পাশে সুরমা নদী। বিলের পানির উচ্চতার চেয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৭ ফুট নীচে নদীর পানি। এই অবস্থায় বিলের পানি চুঁইয়ে যাচ্ছে নদীতে ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে পাড়। এতে হুমকির মুখে পুরো নূরপুর গ্রাম।  গ্রামের দেড়’শ পরিবার এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাবার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের জন্য গত ৮ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এখনো (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামের মৃত আনছার মিয়ার ছেলে শিপন মিয়া উপজেলার দোহালি গ্রামের শামীম মিয়ার কাছ থেকে ১৪ একর জমি চাষাবাদের জন্য চুক্তিতে নেন। পরে তিনি এই জমি নূরপুর গ্রামের আব্দুন নূর মিয়ার ছেলে মুছেনুর মিয়াকে চাষাবাদ করতে দেন। মুছেনুর মিয়া একই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মঈনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আশপাশের আরও কৃষকের জমি কাউকে বাধ্য করে আবার কারও জমি জোর করে দখলে নিয়ে কৃত্রিম জলমহাল গড়ে তোলেন। পানি আটকানোর জন্য হাওরের পানি নামার পথে (মোকামের খাড়ায়) ৩০০ ফুট লম্বা বাঁধ দেওয়াহয়। এখন আশপাশের হাওরে পানি না থাকলেও, নূরপূর গ্রামের পূর্ব পাশের এই অংশে পানি আটকে রাখা হয়েছে। একারণে পশ্চিম পাশের সুরমা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে।

গ্রামের লায়েক মিয়া, সুরুজ্জামান, নিজাম উদ্দিন, শানুর মিয়া ও শাহ জামালসহ পুরো গ্রামবাসী এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। বিষয়টি সরেজমিনে যাচাই করে ব্যবস্থা নেবার জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখনো এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নূরপুর গ্রামের শাহ্ জামাল জানালেন, হাওরের পানি নামার মুখে (মোকামের খাড়ায়) বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সুরমা নদীর পাড়ে নূরপূর গ্রাম, গ্রামের পূর্ব দিকে এভাবে পানি আটকানোয় নদী ভাঙন বেড়ে গেছে। এখন পুরো গ্রামই হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রামের মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন গ্রামের অসংখ্য মানুষ। গ্রামের নিজাম উদ্দিন জানালেন, যুব তরুণদের খেলার মাঠও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম জলমহালে। এখন খেলার মাঠও নেই।

এ প্রসঙ্গে রায়নগর গ্রামের শিপন মিয়া জানালেন, আমি জমি এনেছি দোহালিয়ার শামীম মিয়া’র কাছ থেকে চাষাবাদের জন্য। নূরপুর গ্রামের মুছেনুর মিয়া ও মঈনুল ইসলামকে জমি চাষাবাদের জন্য দিয়েছি। তাদেরকে পানি আটকে মাছ চাষ করার জন্য বাধাও দিয়েছি আমি, এরপরও তারা তা করেছে। মুছেনুর মিয়া জানালেন, যেখানে বাঁধ দিয়ে আমি পানি আটকে রেখে মাছ চাষ করেছি সেই পথ দিয়ে এখন পানি নামে না। আমি কারো জমি জোর করে ঘেরে (জলমহালে) ঢুকাইনি। কথা বলে ঢুকিয়েছি। বর্ষা মৌসুমের পর পানি ছেড়ে এখানে জমি চাষাবাদ করা হবে। আমার পানি আটকানোয় নদী ভাঙছে বলে মনে করি না আমি। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি আমার  জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn