দোয়ারাবাজারে নদী সংরক্ষণ প্রকল্প: কাজ করার পরও নদীগর্ভে একাংশ বিলীন
দোয়ারাবাজার::দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদসহ আশপাশের ভাঙন ঠেকাতে তিন কোটি টাকার নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের একাংশের কাজ সঠিকভাবে না হওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়রা বলেছেন, এ কারণে গত শুক্রবার ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমার পানি বৃদ্ধি পেলে নদীপাড়ের ৭টি দোকান ও একটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সুনামগঞ্জ পাউবো’র পক্ষ থেকে অবশ্য কাজ সঠিকভাবে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ ভবনসহ উপজেলা সদর এলাকা সুরমা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার্থে অস্থায়ীভাবে নদী সংরক্ষণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয় গত বছরের মে মাসে। দুটি প্যাকেজের কাজের জন্য দুইবার দরপত্র আহবান করলেও একটিমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকার আজমেরি বিল্ডার্স’ দরপত্র গ্রহন করে। এ প্রতিষ্ঠানকে নদী ভাঙনের দুটি প্যাকেজের কাজ দেওয়া হয়। এর একটি প্যাকেজে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় ২৩০ মিটার এবং আরেকটি প্যাকেজে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় ২৫০ মিটার নদী সংরক্ষণ করার কথা। দুটি কাজই চলতি বছরের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল। জানুয়ারি পার হয়ে আরো ৬ মাস অতিক্রমের পথে, তবু দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। জনগুরুত্বপূর্ণ ওই প্রকল্প নিয়ে গাফিলতি করায়ই পানি আসতেই দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত শুক্রবার ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথম দফা সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ওইদিনই নদীভাঙন অংশের ফয়জুল করিম, আজাদ মিয়া, হুশিয়ার আলী, মাসুক মিয়া, সুন্দর আলী ও মহিউদ্দিন মোল্লার দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। উপজেলা সদরের আব্দুর রশিদের বাড়িটিও ওইদিন নদীগর্ভে বিলীন হয়। ক্ষতিগ্রস্থ দোকানি ফয়জুল করিম বলেন, ‘নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর পানি কম থাকতে নিচের অংশে কিছুটা কাজ করেছিল। কিন্তু উপরের অংশে তারা কোনো কাজই করেনি। একারণে পানি আসতেই নদীপাড়ের দোকানঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে যায়। একইভাবে অন্যান্য দোকানঘরগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়।’ উপজেলা নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ মোটামুটি ভালই হয়। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ দুইবার সময় বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এখনো নদীর ভাঙন অংশে ব্যবহারের জন্য ৭শ’ বস্তা (জিওবি) ভরাট করা অবস্থায় নদীর পাড়েই পড়ে রয়েছে। এখন ওই বস্তাগুলোও ৬ ফুট পানির নিচে। আমাদের দাবি একটাই, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ যেন দ্বিতীয় পর্যায়ের অসমাপ্ত কাজের বিল ঠিকাদারকে পরিশোধ না করেন।’
সুনামগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার জানালেন, ‘দোয়ারাবাজারে নদীর পাড় সংরক্ষণের অস্থায়ী কাজ করার সময় আমরা বলেছিলাম। ভাঙনের উপরের অংশের দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে উপর থেকে বস্তা বসিয়ে আসা সহজ হবে। কিন্তু দোকানিরা তা মানেননি। কাজ সঠিকভাবেই হয়েছে। মওজুদ থাকা সত্বেও কেবল উপরের সামান্য অংশে বস্তা দেওয়া যায়নি। আকস্মিক ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদী টাইটুম্বুর হয়ে পাড় ডুবে যাওয়ায় বস্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।