দোয়ারা পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডবে ২ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি
১১টি হাওরে ফসলহানি : কাঁদছে কৃষক
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী-অব্যাহত ভারীবর্ষণ। প্রচণ্ড স্রোতে নামছে পাহাড়ি ঢল। ভাঙছে বেড়িবাঁধ। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা, চিলাই, চেলা, মরাচেলাসহ সবক’টি পাহাড়ি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। গত রবিবার সকালে কয়েক ঘণ্টা সূর্য্যরে আলো দেখা গেলেও গতকাল সোমবার মধ্য রাত থেকে ফের শিলাবৃষ্টি, ঝড় ও মুষলধারে ভারীবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার (০৩ এপ্রিল) ভোর থেকে উপজেলার বোগুলাবাজার, নরসিংপুর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়। নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত তুই সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঢলের পানি উঠে পড়েছে বসতঘরে। উপজেলার বোগুলাবাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বসত ভিটায় পানি উঠায় চরম ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন মানুষ। বিপাকে পড়েছেন গবাদি পশু নিয়ে। গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে প্লাবিত এলাকায়। অপরদিকে, উপজেলার ১১টি হাওরের সম্পূর্ণ বোরো ফসল এখন পানির নিচে নিমজ্জিত। ঢলের পানিতে ফসলহানি ঘটায় থামছেনা কৃষকদের কান্না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- সোমবার সকাল পর্যন্ত ১১টি হাওরের ফসল সম্পূর্ণ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েগেছে। হাওরের ৬ হাজার ১০০ হেক্টর বোরো ফসল এখন নিমজ্জিত রয়েছে। উপজেলার বোগুলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জুয়েল জানিয়েছেন- চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে রামনগর, সোনাচড়া, আন্দারগাঁও, বালিছড়া, ক্যাম্পেরঘাট, ইদুকোনা, কইয়াজুড়ি, বোগুলা, ধরমপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সোমবার ভোরে পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানির স্রোতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা বসতঘর ধ্বসে পড়েছে। ভারীবর্ষণ অব্যাহত থাকায় প্লাবনের অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ইউপি সদস্য হাবীবুর রহমান শেখ চান্দ জানান- চিলাই নদীর রাবারড্যাম প্রকল্পের উজান ও ভাটিতে একাধিক ভাঙন দিয়ে প্রচণ্ড স্রোতে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। ইতোমধ্যে দক্ষিণ ইদুকোনা জামে মসজিদ, দক্ষিণ ক্যাম্পের ঘাট জামে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেশির ভাগ বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বোগুলাবাজার বিজিবি ক্যাম্পও। বোগুলাবাজার-বিজিবি ক্যাম্প বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে ঢলের পানিতে ভেসে যাবে অনেক বসতঘর। নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বিজিবি ক্যাম্পটি।
গতকাল সোমবার ভোরে ঢলে পানিতে কান্দাগাঁও-দিঘীরপাড় সড়কে প্রায় ৩ ফুট পানি উঠায় সড়ক যোগাযোগ বর্তমানে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে, উপজেলার নরসিংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- অব্যাহত ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৬শ’ ঘরবাড়ির ক্ষতি, প্রায় ২ হাজারেরও বেশি বোরো ইরি, চাষাবাদকৃত সবজির ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে চেলা ও মরাচেলা নদীর বেড়িবাঁধ। প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানিয়েছেন- খাসিয়ামারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো হাওর আর অবশিষ্ট নেই। সব তলিয়ে গেছে। ঢলের পানিতে এখন প্লাবিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক জানান- সোমবার অব্যাহত বর্ষণ ও ঢলের পানিতে সবক’টি হাওর তলিয়ে গেছে। ঢলের পানিতে কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে গত দুই দিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের কাটাখালী-জালালপুর সুরমা নদীর বেড়িবাঁধটি সংস্কার করায় রক্ষা করা গেছে ওই এলাকার বোরো ফসলহানি। অন্যান্য এলাকায় পিআইসি ও স্থানীয় কৃষকরা চেষ্টা করেও ঢলের পানি ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপজেলার নাইন্দার হাওরে প্রায় ৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ প্রকল্প ভেস্তে গেছে। নিযুক্ত ঠিকাদার কোনো কাজ না-করায় রক্ষা করা গেলনা ওই হাওরের কোটি কোটি টাকার বোরো ফসল। ঠিকাদারের এমন খামখেয়ালিপনার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের বৈঠকে অবহিত করা হয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারিবর্ষণ ও ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।