ধর্মপাশায় সাবেক এমপি নজির হোসেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতা নজির হোসেনকে জিয়া পরিবারের শত্রু, দুর্নীতিবাজ ও বেঈমান বলে আখ্যায়িত করে ধর্মপাশায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ডা. রফিক চৌধুরীর সমর্থিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে ডা. রফিক চৌধুরীর দাবি তিনি এ বিক্ষোভ মিছিলের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। যারা বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা তাঁর সমর্থিত কেউ কি না জানতে চাইলে ডা. রফিক চৌধুরী প্রথমে তাদের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু না বললেও পরে নিজের সমর্থনকারী বলে স্বীকার করেন।
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নজির হোসেনের বিরুদ্ধে এমন বিক্ষোভ মিছিলের ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালেব খানের। তবে এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী আমজাদ এ বিক্ষোভ মিছিলকে অসাংগঠনিক ও ডা. রফিক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যক্রম বলে দাবি করেছেন।
নজির হোসেন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু ১/১১ এর সময় নজির হোসেন দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এতোদিন দলের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় নজির হোসেন বিএনপির চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন। এরপর থেকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নজির হোসেনকে ঘিরে আলোচনার ঝড় উঠে। খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার পর সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠিত করার জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এমপি নজির হোসেন।
ডা. রফিক চৌধুরী সমর্থিত ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক হোসেন চৌধুরী স্বপন বলেন, ‘নজির হোসেন ১/১১ এর সময় বিএনপির বিরোধিতা করেছেন। তিনি সংস্কারপন্থী ছিলেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নজির হোসেনকে চায় না। জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠনের জন্য যদি নজির হোসেনকে হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়ে থাকে তাহলে জেলা বিএনপির নেতারা নীরব কেন? এতেই বুঝা যায় এ ধরনের ম্যাসেজের কোনো সত্যতা নেই।’
উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলী আমজাদ বলেন, ‘ডা. রফিক চৌধুরী নজির হোসেনের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্থ। নজির হোসেনকে জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠিত করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে যদি মিছিল করা হয় তাহলে দলের হাই কমান্ডকে অমান্য করা হয়। ডা. রফিক চৌধুরীর সাথে ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ডা. রফিক বিএনপির কেউ না। আজকের (মঙ্গলবার) এই মিছিল দলের নয় এটি তাঁর ব্যক্তিগত কার্যক্রম। নজির হোসেনকে জেলা বিএনপিকে সংগঠিত করার জন্য কেন্দ্র যে নিদের্শনা দিয়েছে সেই নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দিকে তাকিয়ে আছি, তাঁরা যদি নির্দেশনা দেন তাহলে আমরা ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপি নজির হোসেনের জন্য মাঠে নামতে প্রস্তুত আছি।’
তবে সাধারণ সম্পাদক আলী আমজাদের এমন বক্তব্যের ধারে কাছেও যেতে পারেননি ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালেব খান। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ আছে এবং তাঁকে পাওয়া যায়নি এমনটি লেখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আব্দুল মোতালেব খান মুঠোফোনেই এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’ ডা. রফিক চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে বলে শুনেছি। এ বিক্ষোভ মিছিলের ব্যাপারে আমার কোনো হস্তক্ষেপ নেই। মিছিলের আগে স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সভা করেছেন। সেই সভায় আমি কিছুক্ষণ ছিলাম। তবে সভা শেষ হওয়ার আগেই আমি সেখান থেকে চলে যাই।’ সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ও সংস্কারপন্থী নেতা নজির হোসেন বলেন, ‘ডা. রফিক চৌধুরীর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। তিনি সব সময় দলের বিরোধিতা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করেন। নয় বছর পর বেগম জিয়ার ডাকে আমি তাঁর কাছে গিয়েছি। জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ডা. রফিকের কার্যক্রম পাগালামি ছাড়া কিছুই নয়।’