ভাষানচরেই রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে। কারণ অন্য কোনো স্থানে এত মানুষের জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। বাড়াবাড়ি বা ঝগড়াঝাটি করে সমস্যার সমাধান হবে না। ধৈর্য ধরে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সূত্রে জানা গেছে, সভায় মিয়ানমার সফরে গিয়ে এক লাখ টন চাল কেনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করা কি ঠিক হচ্ছে? কারণ তারা ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ও বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা ঠিক। কিন্তু বাড়াবাড়ি বা ঝগড়াঝাটি করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করলে বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে থাকতো না। আমাদের লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। ভারত- পাকিস্তান সম্পর্কের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক খুবই খারাপ। কিন্তু তারপরও এর মধ্যেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে।

আমরা কারও উস্কানিতে পা দেবো না। আমি যখন জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে ছিলাম তখন মিয়ানমারের প্রতিনিধি নানাভাবে আমাকে উস্কানি দিয়েছে। আমরা বাড়াবাড়ি করিনি। আমরা বাড়াবাড়ি করলে সেখানে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে ওই সময় মিয়ানমার কয়েকবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। তখন অনেকে আমাদের উস্কানিও দিয়েছে। তখন যদি আমরা ধৈর্য না ধরতাম তাহলে আমাদের পক্ষে বিশ্বজনমত সংগঠিত হতো না। মানবতার কথা ভেবেই আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। যে কারণে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ বাহবাও পেয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের প্রসঙ্গটি তোলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষানচর ছাড়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার মতো এত বড় জায়গা খালি নেই। যেসব সংস্থা সহযোগিতা করতে চায় তাদের সহযোগিতায় ভাষানচরে অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুলে রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক সিনিয়র মন্ত্রী সূত্রে জানা গেছে, সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো উগ্র আচরণ নয়, সহনশীল ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। তারা যদি উগ্র আচরণ করেও আমাদের সহনশীল হতে হবে, ধৈর্য সহকারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn