জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম হোমায়রা ওরফে নাবিলা নামের এক নারীকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে জঙ্গি তামিম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। হোমায়রাকে বৃহস্পতিবার ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে বুধবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। হোমায়রাকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপকমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হোমায়রা ওরফে নাবিলা নব্য জেএমবির নারী শাখা ‘ব্যাট উইমেন’-এর প্রধান ছিলেন। ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তান হোমায়রা নিয়মিত জঙ্গিকাজে অর্থায়ন করতেন। ১৫ আগস্ট হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ যে জঙ্গি হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করে, সেই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রথমে খুলনা থেকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী সাইফুলের বন্ধু আবদুল্লাহ বিন মোসাদ্দেক সামিকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ২০ নভেম্বর গ্রেপ্তার দেখানো হয় করিম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হওয়া হোমায়রা ওরফে নাবিলা হলেন তানভীরের স্ত্রী। পুলিশ বলছে, হোমায়রাই তানভীরকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন এবং আকরাম হোসেন খান নিলয়ের মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করেন। আকরামও এখন পুলিশের জিম্মায়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের একটি সূত্র জানিয়েছে, হোমায়রার সম্পৃক্ততার বিষয়টি তারা আগে জানতে পেরেছিল, তবে তিনি অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাঁকে পুলিশ এত দিন গ্রেপ্তার করেনি। হোমায়রা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করেছেন। হোমায়রার বাবার রাজধানীর হাতিরপুলে একটি বিলাসবহুল শপিং মল রয়েছে।জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ ওরফে নিনাকে আদালতে নিচ্ছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীতএদিকে লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তামিম গ্রুপের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া আফরোজ ওরফে নিনাকে (২৪) তাঁর নিজ বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ধূবনী গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার গভীর রাতে লালমনিরহাট পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে আটকের পর ডিবি পুলিশ ও হাতীবান্ধার থানার পুলিশ যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বৃহস্পতিবার হাতীবান্ধার থানার এসআই আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাদী হয়ে আটক সাদিয়া আফরোজ নিনার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। সাদিয়াকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের আমলি আদালত-৪-এর (হাতীবান্ধা) বিচারক আফাজ উদ্দিনের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে লালমনিরহাট ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা যায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের এসআই সিদ্দিকুল হক বলেন, সাদিয়া আফরোজ নিনার সঙ্গে জঙ্গি তামিম গ্রুপের সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক মুঠোফোনে বলেন, সাদিয়ার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে, তাঁকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) সাদিয়াকে  নিয়ে পুলিশ আদালতেই ছিল। তখনো আদালত সাদিয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn