সিলেট নগরের কাজীটুলা এলাকায় বহুতল ভবন থেকে পড়ে নাজিম আহমদ রাবিদ (৩১) নামে যে যুবক মারা গেছেন তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নিহতের পরিবার। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কতোয়ালি থানায় হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, নাজিমের মৃত্যুর ঘটনায় এক নারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শাহনিয়া বেগম (৩০), তার ভাই আকবর (২৬) ও ইয়ামিন (২৪)।
শাহনিয়া বেগমের সাথে কাজিটুলার ঊঁচাসড়কস্থ চৌধুরী ভিলা নামক ৫ তলা বাসার ৫ম তলায় ভাড়া থাকতেন নাজিম। ওই ভবনের নিচ থেকেই সোমবার সকালে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান নাজিম। তিনি শাহপরাণ (র.) থানার পীরের বাজারের আটগাঁও কেউয়া গ্রামের আব্দুন নুর ছেলে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ যুবকের মৃত্যু নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন উল্লেখ করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও নিহতের পরিবারের দাবি এটি হত্যাকাণ্ড। সিলেট ওসমানী মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির একটি সূত্রে জানা যায়, ওই যুবকের ভর্তি তথ্যে গড়মিল রয়েছে। সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটের দিকে দুই থেকে ৩ জন যুবক আহত অবস্থায় রাবিদকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসময় তারা পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে উল্লেখ করে হাসপাতালে ভর্তি করান। ভর্তির তথ্যে তারা আহত যুবকের নাম ‘রাবিদ’ লিখান। এমনকি ঠিকানার জায়গায় দক্ষিণ সুরমা থানার সিলাম এবং পিতার নাম আনোয়ার হোসেন লিপিবদ্ধ করান।
অপরদিকে বিকাল ৪ টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত নিহতের চাচাত ভাই হোসেন আহমদ বলেন, ‘আমার চাচাত ভাইয়ের নাম নাজিম আহমদ রাবিদ। আমাদের বাড়ি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরাণ (র.) থানা এলাকার পীরের বাজার। আর আমার চাচার নাম আব্দুন নুর। চাচাত ভাই কাজিটুলার উঁচা সড়ক এলাকার একটি বাসায় কয়েকজনের সাথে ভাড়া থাকতেন। কিন্তু তারা ভুল তথ্য দিয়ে আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা তারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। সকালে যিনি আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন আমি উনার নাম চিনি না। কিন্তু খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে এসে উনার সাথে কথা বলেছি। উনি বলছেন আমার ভাই সিঁড়ি থেকে পড়ে আহত হয়েছেন। বাসার দারোয়ান তাদের জানিয়েছে। পরে তারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমার ভাইয়ের হাত পায়ের কোথাও কোন আঘাত নেই। কেবল মাথায় আঘাত।’
এদিকে, নাজিমের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার রাতে শাহনিয়া বেগম, আকবর ও ইয়ামিনকে অভিযুক্ত করে কতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের চাচা আলাউদ্দিন আনোয়ার। এরপর পুলিশ তাদের আটক করে।
জানা গেছে, নাজিম ঊঁচাসড়কস্থ চৌধুরী ভিলা নামক ৫ তলা বাসার পঞ্চম তলার বি/৫ ফ্ল্যাটটি খালাতো ভাই-বোন পরিচয়ে শাহনিয়া বেগম ও তার ভাই আকবরের সঙ্গে বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি প্রায়ই রাত কাটাতেন। মৃত্যুর পর নাজিমের থাকার কক্ষ থেকে নানা রকমের মাদকদ্রব্য ও সেবনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নাজিম যাদের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন সেই ছেলে ও মেয়ে তার খালাতো ভাই-বোনও নন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। নাজিমের চাচা আলাউদ্দিন বলেন, এই বাসায় আমার ভাতিজা ভাড়া থাকতো সেটি জানতাম না। নাজিম বিবাহিত, তার তিনটি সন্তানও রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার এবিএম আশরাফুল্লাহ তাহের বলেন, নিহত যুবক যে কক্ষে থাকত সেখান থেকে ২৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের পর ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭৬ বার