নারায়ণগঞ্জ সদরের  ফতুল্লা ও ডেমরায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব -১১  অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, সুমাইয়া আকতার সুমি ওরফে সাথি (২০) মোসাঃ নিলা বেগম (৩৮) শহিদুল ইসলাম @ সাগর (২৭) মাহবুব হাওলাদার (৩৬) মোঃ ইসমাইল (২৩) ও  মোঃ সেলিম (৩২) র‌্যাব প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মোঃ আনিছুর রহমান (৫০) (মাদ্রাসা শিক্ষক), পিতা-আব্দুল মালেক খান, সাং-দড়িচর খাজুরিয়া, থানা-মেহেন্দীগঞ্জ, জেলা-বরিশাল বর্তমানে দড়িচর খাজুরিয়া নিছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশালে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত।  তিনি গত ১৩ মার্চ ২০১৭ তারিখ সকাল ৯টায় মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চযোগে আগমন করে। লঞ্চে থাকা অবস্থায় ১৪ মার্চ ২০১৭ তারিখ তার দুঃস্পর্কের নাতনী সুমাইয়া আকতার সুমি ওরফে সাথি (২০) ফোন করে কুশলাদী বিনিময়ের এক পর্যায়ে তাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য গুলিস্থানে আসতে বলে এবং গুলিস্থানে সাক্ষাত হওয়ার পর সুমি তাকে তাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকে। তারপর বিকালে সুমাইয়া তাকে সঙ্গে নিয়ে তার মা বাবার সাথে দেখা করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন দেলপাড়া কুতুবপুরস্থ বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে আটকিয়ে ৫ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা তার সাথে কথা বলে এবং এক পর্যায়ে মারধর শুরু করে ও কিছু আপত্তিকর ছবি তুলে এবং তাকে জিম্মি করে এবং পরবর্তীতে তারা মোঃ আনিছুর রহমান (৫০)কে  মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে এবং পরিবারকে ফোন করে জরুরী ভিত্তিতে ৩ লক্ষ টাকা বিকাশ করার জন্য বলে। তখন মোঃ আনিছুর রহমান (৫০), কিছু বুঝে উঠতে না পেরে তার দুঃসম্পর্কের নাতনী সুমাইয়া আকতার সুমি ওরফে সাথি (২০)কে বলে আমি টাকা দিবো আমাকে মারতে নিষেধ করো। প্রাণ ভয়ে মোঃ আনিছুর রহমান (৫০) ০১৭১৮-৭০০৩৪৯ নম্বর হতে তার স্ত্রী মোসাঃ রোজিনা (৪০) এর মোবাইল নম্বর ০১৭৪১-৪২৫৯০৭ তে ফোন করে বলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বাঁচাতে চাইলে দ্রæত বিকাশে টাকা পাঠাও। পরবর্তীতে সকল আসামীরা তাকে নিয়ে বসে থাকে এবং পরবর্তীতে আসামীরা মোঃ আনিছুর রহমান (৫০) এর মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের সাথে রাতভর ফোন করিয়ে দ্রæত বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য বলে। পরিবারের লোকজন আতংকীত হয়ে তার জীবন বাঁচানোর জন্য ১৪ মার্চ ২০১৭ তারিখ থেকে ১৫ মার্চ ২০১৭ তারিখের বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট এক লাখ ছত্রিশ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা আরো টাকার জন্য মোঃ আনিছুর রহমান (৫০) পরিবারের সাথে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে ১৫ মার্চ ২০১৭ তারিখ দুপুর ২টায় মোঃ আনিছুর রহমান (৫০)কে অপহরণকারীরা বাসা থেকে সিএনজি যোগে সাইনবোর্ড এলাকায় নামিয়ে দেয়। অপহরণকারীরা চলে যাওয়ার পর তিনি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে।
র‌্যাব আরো জানায়, পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা তাকে সংগে নিয়ে র‌্যাব-১১, আদমজীণগর, নারায়ণগঞ্জ বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণকারীদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাকিল আহমেদ এবং সিনিয়র এএসপি মোঃ আলেপ উদ্দিন এর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন এবং ঢাকার ডেমরা থানাধীন এলাকা হতে ২১ মার্চ ২০১৭ তারিখ ভোরে অভিযান পরিচালনা করে এবং অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা অপহরণ ও বিকাশের মাধ্যমে নগদ এক লক্ষ ছত্রিশ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায়ের কথা স্বীকার করে এবং আরো জানায়, তাদের এই অপহরণ চক্রটি দীর্ঘ ৭/৮ বছর যাবৎ ঢাকা সহ নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় অপহরণ করে ও বিভিন্ন কৌশলে আটকে রেখে এবং জিম্মি করে বিপুল পরিমানে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সাথে স¤পৃক্ত পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী ও তাদের চক্রের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn