নারীর সঙ্গে কথা বলা কণ্ঠটি আমারই
‘কণ্ঠস্বর আমার। আমিই কথা বলেছি। এটা সত্য। কিন্তু এর বেশি কিছু আমি বলব না।’ একজন নারীর সঙ্গে কথপোকথনের ধারণকৃত অডিও শোনানোর পর এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। গতকাল মঙ্গলবার ডিবি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদকারী একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নানা তথ্য উপাত্ত তার সামনে উপস্থাপন করেছি। আমরা তাকে বলেছি, আপনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন তার সঙ্গে এই তথ্য উপাত্তের কোন মিল নেই। আপনার অপহরণের ঘটনাটি তাহলে কি? আপনি তো আপনার বক্তব্যের সপক্ষে কোন তথ্য উপাত্তই দিতে পারছেন না। জবাবে ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘আমার যা বলার আদালতে বলেছি, এর বাইরে আর কিছু বলব না।’ অনেক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চুপ ছিলেন।”
পুলিশ সন্দেহ প্রকাশ করলেও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অনেকটাই অনড় ছিলেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, তাকে সেদিন অপহরণ করে খুলনায় নেওয়া হয়েছিল। ফরহাদ মজহার নিজেই খুলনায় গিয়েছিলেন বলে দাবি করে আসা পুলিশও তাদের বক্তব্য থেকে সরেনি। তার ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাও ভাবছে পুলিশ।
গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর নাটকীয়ভাবে যশোরে উদ্ধার হন তিনি। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে কাটিয়ে ১২ জুলাই শ্যামলী রিং রোডের বাড়ি হক গার্ডেনে ফেরেন তিনি। উদ্ধারের পর ঢাকার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, তাকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে তার বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি কিছু তথ্য উপাত্ত দেওয়া হয়। যা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে গরমিলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরহাদ মজহারকে ডাকা হয়েছিল বলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান জানান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ফরহাদ মজহার এবং অপহরণ মামলার বাদী ফরিদাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেলা সোয়া একটার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ফরহাদ মজহার আদালতে যে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদেও একই কথা বলেছেন। তার কাছ থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নিজের কণ্ঠস্বর স্বীকার করেছেন তিনি। ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, “ফরহাদ মজহারকে খুলনার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দির সাথে তদন্তে মিল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখান থেকে একচুলও নড়ছেন না। তারা (ফরহাদ-ফরিদা) স্পষ্ট আমাদের বলেছেন, ‘আপনাদের তদন্ত আপনারা করেন, আমরা আমাদেরটা দেখব’।”
এর আগে গতকাল সকালে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ফরহাদ মজহার আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তিনি যদি সত্যিকার অর্থে অপহূত হয়ে থাকেন, তাহলে একমাত্র সাক্ষী তিনি নিজেই এবং যারা অপহরণ করেছে তারা। এই পর্যন্ত তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে তিনি অপহূত হননি।” এ অবস্থায় পুলিশের করণীয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাতেন বলেন, কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে, মিথ্যা অভিযোগে মামলা করলে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে। সব প্রক্রিয়া যাচাই করে দেখে আইনগতভাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার ‘তদন্তের সূত্র ধরে’ গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে অর্চনা রানি নামে এক নারীকে নিয়ে আসে পুলিশ। নিজেকে ফরহাদ মজহারের শিষ্য দাবি করে এই নারী জবানবন্দিতে বলেন, সেদিন ফরহাদ মজহার তার জন্য অর্থ জোগাড় করতেই বেরিয়েছিলেন, তিনি তাকে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন।