নিউইয়র্কে ছহুল হোসেন ও পীর হাবিবের মতবিনিময়
সিলেটের কৃতিসন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক আইন সচিব ও নির্বাচন কমিশনার কাজী ছহুল হোসাইন এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট, রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ও টিভি উপস্থাপক পীর হাবিবুর রহমানের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কস্থ বৃহত্তর সিলেটের প্রধান সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র আয়োজনে সোমবার (৭ মে) সন্ধ্যায় সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল প্রবাসীদের এক অনন্য মতবিনিময় সভা। নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সি থেকে প্রবাসের বাঙালী কমিউনিটির প্রথিতযষা গুণী ব্যক্তিবর্গের ব্যাপক আগমন অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। অনেকের আগমন ঘটে দুজন গুণী ব্যক্তিকে এক নজর দেখতে, আবার অনেকের আগ মন ঘটে তাদের বক্তৃতা শুনতে।সাম্প্রতিককালে কাজী ছহুল হোসাইনকে ঘিরে সিলেটের রাজনীতিতে বইছে নতুন হাওয়া। বিশেষ করে সিলেটের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর রাজনৈতিক সমীকরণে তাঁকে ঘিরে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক পীর হাবিবুর রহমানের সত্যনিষ্ঠ, সাহসী ও পরিচ্ছন্ন লেখনীর প্রতি আকৃষ্টতা থেকে তাঁর ক্ষুরধার তরঙ্গায়িত কাব্যিক বক্তৃতার জল-জোৎস্নার সাথে মিলন ঘটানোর অভিপ্রায় ছিল আগত গুণী শ্রোতামন্ডলীর প্রেরণার ক্ষেত্র। দু’ধারার দুজন কীর্তিমানের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে জালালাবাদ এসোসিয়োশনের কার্যালয়ে জমে উঠে নতুন কোলাহল। যা চিরাচরিত অনুষ্ঠানসমূহের গন্ডি ছাড়িয়ে এক নতুন রুপ লাভ করে। বাংলাদেশ থেকে আসা উচ্চ শিক্ষিত ও নানাবিদ অভিজ্ঞতায় সিক্ত অনুষ্ঠানের প্রবাসী বক্তাগণ ছিলেন বাংলাদেশের নানা ধরনের নেতিবাচক রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, সামাজিক অবক্ষয়, প্রশাসনিক দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয়ের উপর সংক্ষুব্ধ। আবার মাতৃভূমির উন্নয়ন ও প্রগতির প্রতি চূড়ান্ত আশাবাদী। যা চিরাচরিত রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের বাইরে বক্তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সহজেই ফুটে উঠে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণের উপস্থিতি এবং বিশেষ কিছু বিষয়ে তাদের নিরপেক্ষ বক্তৃতা আলোচনা অনুষ্ঠানকে নতুন বৈশিষ্ট্যে রুপায়িত করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও রাজনীতিবিদ বদরুল হোসেন খাঁন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রাজনীতিক আতাউল গণি আসাদ। অ নুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আং সালাম, আয়োজক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা একলিমুজ্জামান নুনু, জালালাবাদ এসোসিয়োশনের সাবেক সভাপতি আং বাছিত ও বদরুন নাহার খাঁন মিতা, সংগটক তোফায়েল চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আং রহিম বাদশা, সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী চৌধুরী, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগনেতা কাজী কয়েছ আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক ইশতিয়াক রুপু, গীতিকার ও কমিউনিটি নেতা গৌছ খাঁন, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সমাজসেবা সম্পাদক মানিক উদ্দিন আহমেদ, ক্রিড়া সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, ফেঞ্চুগঞ্জ অর্গানাইজেশনের সভাপতি আং শহীদ দুদু, কমিউনিটি অর্গানাইজার সালেহ আহমদ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ছরওয়ার হোসেন প্রমূখ।
অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি ডি এম রণেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাইকুল ইসলাম প্রমূখ। সভায় প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যতিত দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, জীবনে সর্বদা নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার সাথে সুষ্ঠুভাবে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সিলেটে-১ আসনের রাজনীতিকে ঘিরে তাঁকে নিয়ে অনুষ্ঠানের উপস্থিতি, বক্তাগণ ও সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক নেতাই আগামী নির্বাচনে আমাকে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আমি বলি, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ঐ আসনের জন্য মনোনিত করেন তবে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো, ইনশাহআল্লাহ। কাজী ছহুল হোসাইন নির্বাচন ও ভোটাধিকার বিষয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার বিষয়ে সর্বাত্নক সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং ঐসকল দাবীসমূহ বাস্তবায়নে তার অতীত কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, তিনি যে কোন সময়ে প্রবাসীদের মৌলিক নাগরিক অধিকার ও দাবী দাওয়া পুরণে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। উল্লেখ্য, তিনি আয়োজক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়োশনের একজন আজীবন সদস্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান তাঁর সাহসী লেখনি ও টেলিভিশন টক শো’র প্রেরণামূলক বক্তব্যের প্রতি দলমত নির্বিশেষে প্রবাসীদের সমীহ ও প্রশংসার প্রেক্ষিতে বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ চিন্তা-চেতনার দিক দিয়ে দিনে দিনে যেন নিম্নগামী হচ্ছে। সমাজে তোষামোদী, পরশ্রীকাঁতরতা, অসহিষ্ণুতা আর বিদ্বেষের জয়জয়কার চলছে। কেউ সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। লেখালেখি করতে হয় অনেক সতর্কতার সাথে। তিনি বলেন, যে সমাজে সমালোচনা নেই সে সমাজ অন্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা এখনও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি।
সাংবাদিক পীর হাবিব বলেন, সিলেটে আজ জাতীয় নেতৃত্ব নেই, একজন জাতীয় নেতার জন্য মানুষের মাঝে হাহাকার চলছে। একে একে গুণী ব্যক্তিরা বিদায় নিচ্ছেন, কিন্তু তার বিপরীতে মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন মানসিকতার নেতৃত্বের সৃষ্টি হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে তোষামোদী, ব্যক্তিত্বহীনতা ও পরশ্রীকাতরতাই সমাজের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। তরুণ সমাজের আগামী দিনের সংগ্রাম ও রাজনীতি হবে দুর্নীতি ও কালোটাকার বিরুদ্ধে এবং সৃজনশীল রাজনীতি চর্চার লক্ষ্যে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সত্যনিষ্ট পীর হাবিব বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান রাজনীতিবিদদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার একজন নেতা আছেন যার শেখ মুজিবুর রহমান। আমার একটি ধর্ম আছে যার নাম হচ্ছে মানুষ। আমাকে কেউ প্রশ্ন করে, এত উদ্ধত্যের উৎস কি? আমি বলি শেখ মুজিবুর রহমান। এত বেয়াদবীর উৎস কি? আমি বলি তাও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা কার্যক্রমের উপর আলোকপাত করে বলেন, আমি তাঁকে অভিবাদন জানাব না তো কাকে জানাবো। তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ কীর্তিমান রাজনীতিবিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
পীর হাবিব বলেন, বাংলাদেশ আজ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, সেজন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু সমাজের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। তিনি দেশের রাজনীতিতে দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও ভূমিকা বৃদ্ধির প্রতি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কারণে আজ আদর্শনিষ্ট ও নীতিবানরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের কি রাষ্ট্রের, সর্বপর্যায়েই এদেরকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে হবে। তিনি তাঁর বক্তৃতায় সিলেটের উন্নয়ন ও রাজনীতিতে বৃহত্তর সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ, ফরিদ গাজী, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তরুণ সমাজকে তাদের অনুসরণের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান ও বিশেষ অতিথিকে কোটপিন পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বদরুল হোসেন খান প্রধান ও বিশেষ অতিথিকে সিলেটের গৌরব ও কালজয়ী ব্যক্তিত্ব বলে অভিহিত করেন।