নিউইয়র্কে বাঙ্গালি দম্পতির করোনা জয়ের গল্প
বার্তা ডেস্ক ::নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের সুপরিচিত চিকিৎসক ডা. সায়েরা হক ও ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক দম্পতি করোনা জয় করেছেন। উভয়েই করোনা পজিটিভ ছিলেন। দুজনের মধ্যে এক পর্যায়ে ফজলুল হক এপ্রিলের ১৪ তারিখে নিকটস্থ কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন। তবে দুই দিন পর ১৭ এপ্রিল প্রেসক্রিপশনসহ তিনি বাসায় ফেরেন। তার স্ত্রী ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. সায়েরা হক হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ সেবনসহ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সহযোগী হয়ে একই বাসায় স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী বসবাস করায় বর্তমানে তারা করোনা মুক্ত। ডা. সায়েরা হক এখন তার রোগীদের টেলিফোনে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন এবং ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক চলতি সপ্তাহেই মেট্রোপলিটন ট্রাঞ্জিট অথরিটির (এমটিএ) চাকরিতে যোগদান করতে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে একক সিটি হিসেবে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছেন। সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে ৯৬ সদস্যের পরিবারের অধিকর্তা হিসেবে এই স্বামী-স্ত্রী একত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও ভেঙে পড়েননি। কিশোরগঞ্জের এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে এসে সিটিজেনশিপ গ্রহণের পরই নিকটাত্মীয় সবাইকেই পর্যায়ক্রমে নিউইয়র্কে এনেছেন। মা-বাবা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি, খালা-খালু, চাচা-চাচি এবং তাদের সন্তানের কেউই বাদ নেই। এই পরিবারে অন্তত : সাতজন রয়েছেন যাদের বয়স ৭০ বছরের অধিক। তবে কেউই জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত নন। ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক বলেন, ‘যে ধরনের শঙ্কা সর্বত্র বিরাজ করছে, সেটি আমাকে গ্রাস করতে পারেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক জানান তার করোনা বিজয়ের ঘটনা। বলেন, ‘কোনো সিমটম ছিল না। তদুপরি স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানেরা আইসোলেশনে বসবাস শুরু করেছিলাম মার্চের শেষ দিন থেকে। এমনই অবস্থায় জানলাম যে আমার ভায়রা-ভাই করোনায় আক্রান্ত। তিনি চাকরি করেন নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে। এটি নিশ্চিত হওয়ার পর আমি এবং আমার স্ত্রী ডা. সায়েরা হক ৩ এপ্রিল গেলাম করোনা টেস্ট করতে। ৫ এপ্রিল জানানো হলো যে, আমরা উভয়েই পজিটিভ। এরপর এক ধরনের দুশ্চিন্তা গ্রাস করলেও মনোবল হারাইনি। প্রতিদিনই বেশ কয়েক গ্লাস গরম পানি, লেবু পানি, আদা-লং আর মধু দিয়ে চা পান করি। সঙ্গে থাকে ওষুধ। ফলমূলসহ পুষ্টিকর খাদ্য নিতে থাকি অধিক পরিমাণে। এমনি অবস্থায় শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বলবোধ করায় ১৪ এপ্রিল স্ত্রীর সঙ্গে গেলাম কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন আমার স্ত্রী। তাই সবার পরিচিত হওয়ায় বাড়তি সুযোগ পেলেও সঙ্গে বেডে যেতে দিচ্ছিলেন না স্ত্রীকে। তিনি চিকিৎসক হলেও যেহেতু করোনা পজিটিভ তাই সবাই সতর্কতা অবলম্বনে বদ্ধপরিকর ছিলেন।’ ফজলুর হক বলেন, ‘এক পর্যায়ে স্ত্রীর জেদের কাছে অন্যেরা সমর্পণ করেন এবং আমার দেখভালের দায়িত্ব তাকে নিতে সম্মতি দেওয়া হয়। ১৭ এপ্রিল অনেকটা ভালো মনে হওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরি। এরপর করোনা নামক ভয়ঙ্কর জার্ম থেকে মুক্ত হয়েছি। একইসঙ্গে সায়েরা হকও সুস্থবোধ করায় এখন পুরোদমে টেলি-মেডিসিন দিচ্ছেন তার রোগীদের।’ ফজলুল হক উল্লেখ করেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, একইবাসায় (অনেক রুম থাকায়) এতগুলো বসবাস করলেও আমরা কারও বিরাগভাজন হইনি। আলাদা থেকেছি, খাবার তারা সরবরাহ করেছেন। সবাই চেষ্টা করেছেন হাসি-খুশিতে ভরপুর থাকতে। আমরা যে কঠিন একটি রোগে আক্রান্ত, যে রোগে প্রতিদিনই অনেক পরিচিত মানুষের মৃত্যুর সংবাদ সবাই পাচ্ছেন- তবুও কেউই হাল ছাড়েননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনোবল হারালেই বিপদ এবং পারতপক্ষে হাসপাতালে না যাওয়াই শ্রেয়। কারণ, বাসায় অবস্থান করেও চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। আমরা সেটি করেছি এবং প্রমাণও পেলাম হাতেনাতে।’
করোনাবিজয়ী ডা. সায়েরা হক বলেন, ‘আমি ভালো হয়েছি বলে খুব খুশি হতে পারছি না। কারণ, এরই মধ্যে আমার অনেক রোগী মারা গেছেন। আরও অনেকে হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এত পরিচিতজনের মৃত্যু সংবাদ আমাকে বিষণœতায় আক্রান্ত করছে। তারপরও চিকিৎসাধীন সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি- মনোবল হারাবেন না। তাহলে করোনা আসকারা পাবে। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বাসার বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন। অন্য মানুষের থেকে ৬ ফুট দূরে অবস্থান করুন। করোনা অবশ্যই পরাস্ত হবে।’ সৌজন্যে : বিডি প্রতিদিন