নিউইয়র্কে ২৬তম আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা শুরু
“বই হোক প্রজন্ম-সেতু” এ স্লোগানকে ধারণ করে এবং বাংলা ভাষাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী ২৬তম আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলা। ১৯ মে (নিউইয়র্ক সময়) পড়ন্ত বিকেলে ফিতা কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন কলকাতার বিশিষ্ট লেখক ও বিশ্বভাতীর সাবেক অধ্যাপক পবিত্র সরকার। এসময় বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও প্রকাশকেরা এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউর পিএস-৬৯-এ শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে রবিবার পর্যন্ত। উৎসবের শুরুতে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এরপর মঞ্চে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠানমালা। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ড. লীনা তাপসী, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার, কবি ইকবাল হাসান, বিশিষ্ট ছড়াকার লুৎফর রহমার রিটন, লেখিকা নাজমুন নেসা পিয়ারী, কবি আমীরুল ইসলাম, প্রকাশক আহমদ মাযহার, আহ্বায়ক ফেরদৌস সাজেদীন, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল হোসেন, ড. হুমায়ূন কবীর, জসিম মল্লিক, কণাবসু মিশ্র, আলমগীর শিকদার লোটন, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, নিনি ওয়াহেদ, দুলাল তালুকদার, সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার, খায়রুল আনাম, তাজুল ইমাম, তাপস কর্মকার, লতিফুল ইসলাম শিবলী, হাসান ফেরদৌস প্রমুখ। এর আগে তাদের সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- এবারের উৎসবের আহ্বায়ক ফেরদৌস সাজেদীন। তিনি এবারের আয়োজন সফল করার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘আলো আমার আলো’ পরিবেশন করে আনন্দধ্বনি। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, আমীরুল ইসলাম, ড. লীনা তাপসী, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জামাল উদ্দিন হোসেন, ফেরদৌস আরা, রোকেয়া হায়দার এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান। শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন- দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসীরা প্রবাসেও বাঙালি সংস্কৃতিকে মণেপ্রাণে লালন করছেন। তিনি বলেন- ২৬তম বাংলা উৎসব ও বইমেলা বাঙালির বিশ্বায়ন। অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন- বিশ্বজুড়ে বাঙালির জয়জয়কার। বাঙালি সংস্কৃতি পৃথিবীর দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালির কবিতা, সঙ্গীত, চিত্রকলা বিশ্বের পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে।
ড. লীনা তাপসী বলেন- আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির মৌলিক গুণ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি সেই রক্তের দাগ কখনো মুছে যাবে না। সেই দাগকে আমরা জিইয়ে রাখতে চাই। আমাদের প্রজন্মরা যেন জানতে পারে এই বাংলা ভাষার এই বর্ণিল শব্দগুলোর জন্য এই বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন- বাংলা ভাষার যে ক্ষমতা, এই ভাষার যে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জণবর্ণ তা অনেক ক্ষমতাবান। আমরা বাংলা ভাষা জানি বলেই পৃথিবীর যে কোনো ভাষা অতি সহজেই আমরা উচ্চারণ করতে পারি। শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে ‘আবহমান বাংলা’ শীর্ষক নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্জলি। এটি পরিচালনা করেন চন্দ্রা ব্যানার্জি। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা পরিবেশন নত্যৃ, আবৃত্তি ও গান। এতে অংশ নেয় অন্তরা সাহা, মার্জিয়া স্মৃতি, রিতিকা দেব, চন্দ্রিকা দে, শ্রুতিকণা দাশ, বিরশা ও শতাব্দী রায়। রবীন্দ্র সঙ্গীতের একক পরিবেশনায় অংশ নেন শামা রহমান। দ্বিতীয় দিন শনিবার (নিউইয়র্ক সময়) উৎসব শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং শেষ দিনের অনুষ্ঠানও শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে এবং তা চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও বইমেলার অনুষ্ঠান মঞ্চের ব্যবস্থাপনা, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিশ্বজিত সাহা, নিনি ওয়াহেদ, হাসান ফেরদৌস, রানু ফেরদৌস ও সেমন্তী ওয়াহেদ।