নিখোঁজ সাংবাদিক ‘উৎপল’ উদ্ধারে অসুবিধা কোথায়?
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানাভাবে নানা পদ্ধতিতে মানুষ গুম হওয়ার কাহিনী অনেক পুরনো। কয়েকদিন পরপরই গুম-নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়। কেউ কেউ ফিরে আসেন। কারো কারো লাশ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত বিরোধ-রাজনৈতিক বিরোধ-ব্যবসায়িক বিরোধ কত বিরোধের শিকার হয়ে কত মানুষ এভাবে লাপাত্তা হয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে, নাম ব্যবহার করেও অনেক গুমের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এইসবে গুম বা নিখোঁজের ঘটনার শিকার যারা ভাগ্যক্রমে ফিরে আসেন তারা পুনর্জন্মের বিনিময়ে বোবা হয়ে যান, শিশু হয়ে যান। কথা বলেন না। এইসব দেখে-শুনে আমরা অভ্যস্ত। খুব একটা পাত্তা দেই না যতক্ষণ না নিজের উপর পড়ছে।
গত ২০ দিন ধরে ঢাকা থেকে জ্বলজ্যান্ত এক সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজ। কে তারে নিয়ে গেছে, কেন নিয়ে গেছে, কোথায় রাখছে বের করার মতো যথেষ্ট সুযোগ থাকা স্বত্বেও তাকে উদ্ধার করা হচ্ছে না। আজকালতো মোবাইল কলের সূত্র ধরেই সব আসামী ধরা পড়ে। গতকালও দেখলাম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় বিএনপি নেতার অডিও রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে। অথচ ক‘দিন আগেই উৎপলের বাবাকে কয়েক দফা ফোন করা হয়েছে। টাকা চাওয়া হয়েছে। সেই কলের সূত্র ধরে কি কিছু করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? পুলিশ কমিশনার আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেই আশ্বাসের ফলো-আপ কি? রাষ্ট্রের একজন নাগরিক অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যেমন জরুরি কাজ তেমনি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক অপহৃত হলে, নিখোঁজ হলে, গুম হলে তাকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ প্রয়োগ করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। উৎপলের ব্যাপারে রাষ্ট্র কেন নীরব? সে পূর্বপশ্চিম বিডি নামে একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক বলে? বড় কোনও টিভি-পত্রিকার সাংবাদিক না বলে? ধরা যাক সে সাংবাদিক না। একজন সাধারণ নাগরিকের সুরক্ষা দেয়াওতো রাষ্ট্রের কর্তব্য।
নাগরিক হিসেবে নাগরিকের নির্বিগ্নে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র উৎপলের ব্যাপারে কোনও আপডেট না দেওয়ার কি কারণ? তাকে উদ্ধারে সব চেষ্টা ব্যর্থ? চেষ্টা কি করেছেন? যে যে পদ্ধতির ভিতর দিয়ে গেলে একটা নিখোঁজ মানুষের খোঁজ পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেইসব পদ্ধতি ফলো করে থাকলে তাকে এখনো কেন পাওয়া গেল না? আমরা কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত হই। কত কিছু ভাইরাল কি। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক, একজন সংবাদকর্মীর মায়ের কান্নাটাকে ভাইরাল করতে পারি না? জলজ্যান্ত একটা মানুষকে উদ্ধারের দাবিটাকে ভাইরাল করতে পারি না?