নিজ গ্রামে জঙ্গি রিপনের দাফন সম্পন্ন
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ফাঁসি কার্যকর হওয়া জঙ্গি দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় তাদের পারিবারিক কবস্থানে দাফন করা হয়। বিবার্তাকে এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মুত্তাকিন। এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাশবাহী শাহজালাল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় রিপনের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামে। পরে তার গ্রামে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. ইব্রাহিম জানাজার নামাজ পড়ান। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে রিপনের লাশবাহী শাহজালাল অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মৌলভীবাজারে রিপনের গ্রামের বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। এসময় অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ও পিছনে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। রাত ১০ টা ১ মিনিটে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের রায় কার্যকর করা হয়। এরপর কারা অভ্যন্তরেই রিপনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষনেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ‘মুফতি’ আব্দুল হান্নানের লাশও নিয়ে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে তার লাশ নিয়ে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া হয়। মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামে। তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া জঙ্গি নেতা শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও লাশও তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুধবার ১২টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার লাশ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের মৈশাদী গ্রামে। তবে এর আগে বিপুলের লাশ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন তার বাবা হেমায়েত হোসেন পাটওয়ারী। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় বিপুলের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন। মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০০৯ সালে আসামিরা আপিল করেন। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই আসামি মুফতি হান্নান ও বিপুল। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ করে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আসামিরা এ রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানালেও গত ১৯ মার্চ তা খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২১ মার্চ প্রকাশিত হলে পরদিন ২২ মার্চ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করে কারাগারে পাঠান বিচারিক আদালত। মৃত্যু পরোয়ানা ও সর্বশেষ রায় শোনার পর গত ২৭ মার্চ পৃথকভাবে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপন নিজ নিজ কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। শনিবার (৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার পর বুধবার (১২ এপ্রিল) জেলকোড অনুসারে ফাঁসি কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।