নির্বাচন নিয়ে সিলেটে আ.লীগ নেতারা তৎপর
মুহিত চৌধুরী:সিলেটের রাজনীতির মাঠ অনেটা স্থবির বলা যায়। নেই প্রচলিত রাজনীতির তেমন কোন কর্মসুচি। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি রাজপথে না থাকার কারনে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেকটা রিলাক্স মুডে সময় পার করছেন। তবে নির্বাচনমূখী নেতারা বসে নেই। জাতীয় সংসদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের তৎপরতা অনেকটা নিরবে। তবে ইতোমধ্যে কেউ কেউ অবশ্য প্রকাশ্য ঘোষণাও দিয়েছেন।
সংসদ নির্বাচন:
গত ২২ মার্চ সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো সিলেট বিভাগীয় আওয়ামীলীগের তৃণমুল প্রতিনিধি সম্মেলন। এই সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হবার ঘোষণা দেন। ইতিপূর্বে দু’একবার তিনি এমন ঘোষণা দিলেও সেগুলো ছিল ক্ষুদ্র পরিসরে। আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। তৃণমুল প্রতিনিধি সম্মেলনে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের এমন ঘোষণায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ এবং সিলেটের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিস্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সিলেটের একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিলেট-১ আসন অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আসন । এখানে ইতোপূর্বে যারা প্রার্থী হয়েছেন কিংবা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সকলেই ছিলেন সৎ, প্রঞ্গাবান, উচ্চশিক্ষিত, দেশ-বিদেশে ছিল যাদের বিশেষ সুনাম এবং ব্যাপক পরিচিতি। তিনি বলেন, কাউকে সিলেট-১ আসনের মতো আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা করার আগে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। আর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অত্যন্ত সুশৃ্খংল একটি দল। এখানে চাইলেই সব পাওয়া যায়না দলের সিন্ধান্তই মুখ্য বিষয়।
অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের প্রার্থীতা ঘোষণাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ভাল চোখে দেখছেনা। একটি সুত্রমতে, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ বলছে প্রকাশ্য জনসভায় এমন ঘোষণা দেয়া সঠিক কাজ হয়নি। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিতে পারে এবং দলকে দুর্বল করতে পারে। কোথায় কে প্রার্থী হবেন সেটা দল সিন্ধান্ত নেবে।
সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আর নির্বাচন করবেন না বলে বছর দেড়েক আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সাথে তিনি স্পষ্ট ইং্গিত দিয়ে বলেছিলেন তাঁর উত্তরাধিকারী হচ্ছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে আব্দুল মোমেন। অর্থমন্ত্রী এসময় আনুষ্ঠানিকভাবে ড.মোমেনকে পরিচয় করিয়ে দেন। এর পর থেকে ড. মোমেন সিলেটের উন্নয়ন এবং দলীয় কর্মী ও সাধারণ মানুষদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। ফলে সিলেট-১ আসনে তিনিই আওয়ামীলীগের একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন এমন ধারণা সাধারণ সাধারণ মানুষ করে বসে।
সিলেট-২ আসন নিয়ে আওয়ামীলীগের কোন নেতার তেমন কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও ভিতরে ভিতরে বেশ উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন ‘২৪ ঘন্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে খ্যাত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। এই আসনটি বিএনপির গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর দুর্গ হিসেবে পরিচিত। গত নির্বাচনে বিশেষ রাজনৈতিক কারনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শফিক তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আসনটি ছেড়ে দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে। শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে থাকলেও তাঁর ভাবনা অন্য খানে। ওসমানী নগর উপজেলা নির্বাচনে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেন। এই পরাজয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ প্রভাব রাখতে পাওে বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্যদিকে ইলিয়াস পতœী লোনাও একটি ফ্যাকটর।
এদিকে, সিলেট-৩ আসনেও অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রার্থী হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি সম্প্রতি এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন দল চাইলে তিনি এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের এক ঘোষণায় নড়ে-চড়ে বসেন বর্তমান সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী। তিনি তাঁর প্রাথীতা নিশ্চিত করতে জোর লবিং চালু রেখেছেন বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে।
সিলেট-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরান আহমদ কিছুটা ফুরফুরা মেজাজে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকেট পাওয়ার বিষয়টি নাকি অনেকটা নিশ্চিত।
গত নির্বাচনে বিশেষ রাজনৈতিক কারনে সিলেট-৫ আসনটিও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে ভিন্ন রাজনৈতিক প্র্রেক্ষাপট এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সে জন্য সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী হতে চান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুক উদ্দিন আহমেদ এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির। তারা এব্যপারে জনমত নিজেদের পক্ষে নিতে বেশ তৎপরত রয়েছেন।
সিলেট-৬ আসন গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নিয়ে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বর্তমানে এই আসনের এমপি। প্রবাসী অধ্যুসিত এই আসনে অনেকেই প্রার্থী হবার তদবির শুরু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন এডভোকেট লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন:
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এখনও প্রায় দেড় বছর বাকী অথচ এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হবার জন্য সিলেট আওয়ামীলীগের শীর্ষ দুই নেতা এবং একজন ব্যবসায়ীকে নানা ভাবে তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে। এরা হলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র,আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
গত সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এই নির্বাচনে দুইবার সিসিকের নির্বাচিত মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। এই পরাজয়কে তার সমর্থকরা দেখছেন ভিন্নভাবে। তারা বলছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। জাতীয় রাজনীতির মেরুকরনে জন্য সে সময় তিনি হেরেছিলেন। আগামী নির্বাচনে কামরানই বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন বলে তারা আশাবাদী। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও অতীতের ভুল এবং ব্যর্থতা কাটিয়ে আবারো নগরপিতা হিসেবে নগরভবনে ফিরতে চান। এ বিষয় নিয়ে তাঁর সাথে কথা বললে তিনি দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, সিলেটের মাটি ও মানুষের সাথে অতীতে যেমন ছিলাম ভবিষ্যতেও তেমনি থাকতে চাই। তিনি বলেন আমি আওয়ামীলীগ করি আমার দল এবং আমার নেত্রী দলের স্বার্থে আমাকে যেখানে দিবেন আমি সেখানেই কাজ করবো। নগরবাসী আমাকে আবারো মেয়র হিসেবে দেখতে চান তাদের এই আগ্রহের কথা তারা নানাভাবে প্রকাশ করছেন দেখে সত্যি আমি অভিভ’ত।
সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেট সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সিলেট ছাত্রলীগের একটি অংশ তাকে সমর্থন দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ইতোপূর্বে ’আসাদ ভাইকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ এই শিরোনামে বিলবোর্ড এবং পোস্টার লাগানো হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের বক্তÍব্য জানতে চাইলে তিনি দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, সিলেট সিটিকর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হতে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত এবং এই সিদ্ধান্তে অটল। তবে সব কিছু নির্ভর করবে দল এবং আমাদের নেত্রীর উপর। দল আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমি প্রার্থী হব না। যাকে দেবে তার পক্ষে কাজ করব।
সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডরেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী হতে চান। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায় সিলেট আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ তাকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা চাচ্ছে ঢাকার মেয়র আনিসুল হকের মতো মাহি উদ্দিন সেলিমকে সিসিকে সেট করতে। সরকারের প্রভাবশালী মহলের সাথেও এ নিয়ে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। মাহি উদ্দিন সেলিমকে কীভাবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হবেন এ বিষয়টি জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিকসিলেটডটকমকে বলেন, সিলেটের মানুষ চাইলে মেয়র প্রার্থী হতে আমার আপত্তি নেই। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ থেকে সবুজ সংকেত পেলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামীলীগে যোগ দিবেন।