নি র্বা চ নী হা ল চা ল (সুনামগঞ্জ-৪)
একেএম মহিম-সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৪ আসন। জেলা সদরের আসনটি সব সময় গুরুত্ব পায় জেলাবাসীর কাছে। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এ আসনে দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা। প্রতিটি দলই চায় এ আসনে নিজ দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রতিটি গ্রামে।সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) ইকবাল হোসেন ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ ইকবালের পুত্র ইনান হোসেন প্রিয়। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে তিন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মতিউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আরো বেশ কয়েকজন মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হলেও মাঠের প্রচারণায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জে মতবিনিময় সভা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। বিভিন্ন দিবসে শুভেচ্ছা দিয়ে পোস্টার ও লিফলেট সাঁটিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। ফেসবুকের প্রচারণায় রয়েছেন সরব। বিগত সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি জেলা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। ওই সময় কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তবে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সদর আসনটি কোনো শরিক দলকে ছেড়ে দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, জেলা সদরের আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলকে শক্তিশালী করতে ও জেলার রাজনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এ আসনটি দলের প্রয়োজন। শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতে হলে জেলার অন্য আসন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু জেলা সদরের আসন ছাড় দিতে নারাজ তারা। এ বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করবেন বলে জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা জানান। বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেন, এ আসনটিতে অতীতে একাধিক বার বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে দুই বিএনপি নেতা সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ওই দুই উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও বিএনপির একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এ বিবেচনায় দল নির্বাচনে গেলে তাদের মনোনীত প্রার্থীই জয়লাভ করবে বলে তারা আশাবাদী। দলে গ্রুপিং-কোন্দল নিরসন হওয়ায় অন্য যে কোনো প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। বিএনপি নেতারা জানান, অতীতে বিএনপির সংসদ সদস্য থাকাকালে এ আসনে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া বলেন, দেশে এখন কোনো নির্বাচনী পরিবেশ নেই। পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে। অতীতে আমি এই আসন থেকে একাধিক বার নির্বাচিত হয়েছি। আমার সময়ে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা আর কেউ করেনি। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, দলের নেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন জোটগত নির্বাচন হলেও জেলা সদর আসনটি ছাড় দেয়া হবে না। এ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমি এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ী হবো। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সম্পাদক পদে ছিলাম। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। দল থেকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে এ আসনের প্রতিটি গ্রামে উন্নয়ন হয়েছে। আমার সময়ে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে এ আসনে। পাশাপাশি আমি দলকেও সুসংহত করেছি। এখানে প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে যেই আসুক না কেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।সূত্র-মানবজমিন