নীতিবাবু মারা গেছেন
সাজেদুল হক-তারিখ বলা কঠিন। তবে শুরুটা বহুদিন আগেই। পুকুর চুরি কথাটি তো আর এমনি এমনি আসেনি। অবক্ষয়। শেষে নীতি নৈতিকতার নিদারুণ মৃত্যু। গল্পের পর গল্প। তবে এতোটা সম্ভবত অতীতে কখনো হয়নি। বৃটিশ মূল্যবোধ কথাটি একসময় খুব শোনা যেতো। এই ভূমের মানুষের খুব বেশি প্রাচুর্য কখনো ছিল না। ভাতে-মাছে বাঁচার চেষ্টা ছিল সবসময়। জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। তবে সবসময় নীতি আর আদর্শকে সম্মানের চোখে দেখা হতো। একজন স্কুল শিক্ষক খুব বেশি বেতন পেতেন না। টেনেটুনে চলতো সংসার। কিন্ত সমাজের সবচেয়ে সম্মানের আসনে ছিল তার স্থান। আদর্শবাদী রাজনীতিবিদকেও সমাজ দেখতো সম্মানের চোখে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। আরো চাই নেশা পেয়ে বসে মানুষকে। ঘুষ, দুর্নীতি যে যেভাবে পারেন টাকা কামাতে থাকেন। এই টাকা শুধু বিলাসী জীবন নয় তারা ব্যবহার করতে থাকেন সম্মান কেনার কাজেও। বিত্তশালীরা রাজনীতির সব প্রভাবশালী জায়গা দখলে নেন। স্কুল কমিটির সভাপতি তারা, মসজিদ কমিটির সভাপতিও। ইমাম সাহেব আর শিক্ষকরা দেখতে পান তারা কতটা অসহায়। অর্থ হয়ে পড়ে ক্ষমতার প্রধান মানদন্ড। নৈতিকতার মৃত্যুর প্রতীকী চিত্র হিসেবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে আবির্ভাব ঘটে শাহেদ করিমদের। তার গল্প এরইমধ্যে সবার জানা। যদিও তাকে নিয়ে বিস্ময় কাটানো কঠিন। এমন একজন প্রতারক কীভাবে নিজেকে সেলিব্রেটিতে পরিণত করেন তার হিসাব এখনো মেলে না। শাহেদ আখ্যান শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আবির্ভাব ঘটেছে লুপা তালুকদারের। তার অনেক পরিচয়। নেত্রী, লেখক, সাংবাদিক। ধরা পড়েছেন শিশু অপহরণ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার দেয়াল নীতিবাক্যে ভরপুর। শাহেদের তুলনায় চুনোপুঁটি হলেও তাদের মিলও কম নয়। কেউ কেউ বলছেন, যেন মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই-বোন। ডা. সাবরিনার গল্পটিও কি কম যন্ত্রণাদায়ক? একজন খ্যাতিমান চিকিৎসককে অর্থের নেশা কোথায় নিয়ে যায়। অর্থই যে ক্ষমতার উৎস তার অবিশ্বাস্য পতনে সেটা আরো স্পষ্ট হয়।
ভোগবাদী এক সমাজে বাস করি আমরা। ত্যাগ নয় ভোগেই সুখ-এটাই এখন এই সমাজের মূলমন্ত্র। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের গতি এখানে সুপারসনিক। নীতি আর আদর্শবান মানুষকে দেখা হয় অবজ্ঞার চোখে। অর্থই যখন ক্ষমতার উৎস তখন শাহেদদের উত্থান হবে না এটা আশা করা বড্ড বোকামি। পর্যবেক্ষকরা এ ব্যাপারেও মোটাদাগে একমত, শাহেদরা এই সমাজ, রাষ্ট্রের কোন ব্যতিক্রমী চরিত্র নয়। বরং এদের সংখ্যা অনেক। প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ সত্যবাবুর মৃত্যুর কাহিনী লিখে গেছেন। তার এতোদিন পর এসে আমরা কেবল নীতিবাবুর মৃত্যুই দেখছিনা, সম্ভবত এর রীতিমতো দাফনও সম্পন্ন হয়েছে।