পদ-পদবী নিয়ে নতুন রূপে পুরোনো দ্বন্দ্ব
সুনামগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত দুই জাতীয় নেতাকে কেন্দ্র করে যে মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছিল সে মেরুকরণে ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও এখনও সেই দ্বন্দ্বের রেশ রয়ে গেছে উপজেলায়-উপজেলায়। দেড়যুগ পুরোনো সেই দ্বন্দ্বে আসন্ন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নতুন রূপে দেখা দিয়েছে। অনেক উপজেলা ও পৌরসভায় কমিটিতে পদ-পদবী পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সামাদ আজাদ ও সুরঞ্জিত সেনের অনুসারীরা। অনেক উপজেলায় আবার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ‘ঐক্য’ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের আসনভুক্ত জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখানে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এমএ মান্নানের পছন্দই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেড় যুগ পুরোনো তুমুল দ্বন্দ্বে আব্দুস সামাজ আজাদের সাথে ছিলেন বর্তমান সভাপতি মতিউর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম প্রমুখ। এর বিপরীতে সুরঞ্জিত সেনের পক্ষে ছিলেন প্রয়াত পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ অন্যরা।
সুনামগঞ্জ সদরে সামাদ আজাদপন্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম আবারো উপজেলা সভাপতি পদে থাকতে চান। তার বিপরীতে এই পদের প্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, অ্যাড. মণীষ কান্তি দে মিন্টু। সুনামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সবাই ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ প্রয়াত সম্পাদক আয়ূব বখত জগলুলের পছন্দের। জগলুলের অনুপস্থিতিতে পুরো কমিটিই বিপরীত বলয়ে চলে যাওয়ার কানাঘোষা শোনা যাচ্ছে। ছাতকে সভাপতি হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানকে নিয়ে আসতে চান সুরঞ্জিত সেনের শিষ্য সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। তার প্রতিপক্ষ পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও শামীম আহমদ চৌধুরীর পছন্দ বর্তমান আহ্বায়ক আব্রু মিয়া তালুকদার। একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এমপি মানিকের পছন্দ সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক। কিন্তু এই উপজেলায় শামীম-কালামের পছন্দ বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীমুল ইসলাম শামীমকে। তবে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ আহমদ তারেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় সুরঞ্জিত সেনপত্নী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার বিপরীতে নিজের আস্থাভাজনদের বসাতে চাইছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান। দিরাইয়ের বর্তমান সভাপতি আসাব উদ্দিন সরদারের স্থলে সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন মাস্টারকে চান মতিউর। শাল্লায় তার পছন্দ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অলিউর রহমান। দুই উপজেলায় সাবেক কমিটিগুলো বহাল রাখার পক্ষে জয়া সেনের অনুসারীরা।
এদিকে, সুনামগঞ্জ-১ আসনের জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুরে সেন বলয়ের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সাথে নেতৃত্ব নিয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সামাদ বলয়ের জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের। সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার রয়েছেন শামীমের সাথে। ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির বর্তমান সভাপতি সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিপরীতে সভাপতি হতে চান শামীম বলয়ের শামীম আহমদ মুরাদ। জামালগঞ্জে রতনপন্থী বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ আলীর বিপরীতে শামীমের পছন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দ্বিজেন্দ্র লাল দাস। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবুল হোসেন খান জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটের বিশ্বস্ত। তার বিপরীতে সভাপতি পদ প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমনের আস্থাভাজন সাবেক যুবলীগ নেতা মোতাহার হোসেন আখঞ্জী শামীম। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান বলেন, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভার সবগুলো কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে। এখানে কে কোন বলয়ের, কার পরিচয় কী, সেটা মুখ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। সৌজন্যে দৈনিক সুনামকন্ঠ।