পরকিয়া করে মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে, নৃশংস প্রতিশোধ নিল ছেলে
বার্তা ডেস্ক :: বাবা সৌদি প্রবাসী। দেশে মায়ের সঙ্গে থাকেন তিন সন্তান। এরই মধ্যে প্রতিবেশী নবী হোসেনের সঙ্গে মায়ের পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। মা দ্বিতীয় বিয়ে করে নাবী হোসেনের সঙ্গে নতুন সংসার শুরু করেন করোনার সময়ে। মায়ের পরকিয়া এবং দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ছেলে। এই কারণে ভাড়াটিয়া খুনিকে দিয়ে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে হত্যা করিয়েছে সাব্বির। এরপর লাশ ফেলে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া থানা এলাকায়। এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে খুনীদের ছিল নানা পরিকল্পনা। প্রথমে ভিকটিমকে অপহরণ করা হয় ভৈরব থেকে। প্রাইভেটকারে করা হয় খুন। আর মৃত্যু নিশ্চিত করতে নবী হোসেনের পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয় গাড়িতে বসেই। শেষে মরদেহ ফেলা হয় পটিয়া থানা এলাকায়। মরদেহ ফেলে দেওয়ার পর খুনী যায় কক্সবাজার ভ্রমণে। পরে ফিরে আসে ভৈরবে। এরপরও খুনীদের শেষ রক্ষা হয়নি। পিবিআইয়ের ধারাবাহিক অনুসন্ধানে গ্রেপ্তার হয়েছে আশিক মিয়া (২১) ও সুমন মিয়া (২৪)। গতকাল শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন জানায় পিবিআই। আজ রবিবার এই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহাম্মদ খোন্দকার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
দুই আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমাণ্ড আবেদন জমা দিয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। রবিবার আদালত শুনানি শেষে আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। সোমবার তাদের কারাগার থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এতে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এসপি নামজুল হাসান বলেন, গত ১৭ অক্টোবর পটিয়া উপজেলা কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিখাইন এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ থেকে একটি মরদেহ উদ্ধার করে পটিয়া থানা পুলিশ। মরদেহের গলায় গামছা প্যাঁচানো এবং পায়ের রগ কাটা ছিল। ওইদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিবিআই নিহতের আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়, নিহত ব্যক্তির নাম নবী হোসেন। তিনি ভৈরব জেলার আগানগর ইউনিয়নের পুরানচর এলাকার বাসিন্দা।
এই ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নবী হোসেনের ভাই। ওই মামলাটি তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। তদন্ত পর্যায়ে গত ভৈরব থেকে দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, পরবর্তীতে একটি প্রাইভেটকার এবং একটি নোহা গাড়ি জব্দ করা হয়। ধৃত দুই আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মা পরকিয়া করে নবী হোসেনকে বিয়ে করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সাব্বির (মায়ের প্রথম ঘরের সন্তান) ৬০ হাজার টাকায় খুনী ভাড়া করে। এই ভাড়াটিয়া খুনীদের দুইজন গ্রেপ্তার আশিক ও সুমন। তাদের আশিক ১৮ হাজার এবং সুমন ১৭ হাজার টাকা পেয়েছে। খুনের বর্ণনা দিয়ে আসামিরা পিবিআইকে জানিয়েছে, সাব্বির খুনের জন্য ভাড়াটিয়া ঠিক করে তুষার নামের একজনকে। এই তুষারই তাদের ঠিক করে। সাব্বির এবং তুষার দুজনই এখনো অধরা। খুনের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর মাইক্রোবাস ভাড়া করে নবী হোসেনকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথম দিন তারা সফল হয়নি। এই কারণে পরদিন ১৬ অক্টোবর একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে নবী হোসেনকে অপহরণ করা হয়। অহরণের পর গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলে আসে। পথিমধ্যে কুমিল্লায় এসে নবী হোসেনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়।-কালের কণ্ঠ