ইমানুজ্জামান মহী- পরিকল্পনামন্ত্রী সর্বপ্রথম সরকারী কর্মকর্তাদের দূর্ণিতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন,’ফেরাউনের রাজত্বে আমলা ছিলো। স্বয়ং ফেরাউন তাদেরকে ঠিক করতে পারেনি৷’ পরিকল্পনামন্ত্রীর কথার সুত্রধরে গত ২৮ জুন আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমদ সহ বিরোধীদলের বেশ কয়েকজন সাংসদ সংসদ উত্তপ্ত করে তুলেন। আমলাদের দাপটে তারা আত্মসম্মান বাঁচাতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জেলাওয়ারি স্বাস্থ্য সেবা ও সরকারী কার্যক্রম সম্বন্নয় করতে সচিবদের দায়িত্ব দেয়ায় তারা অসন্তোষ্ট প্রকাশ করেন। জেলার দেখবাল করার জন্য রাজনীতিবিদের পরিবর্তে জেলায় জেলায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরে।

আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহমদ আমলা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম,এ,মান্নানের দেয়া বক্তব্যের উদৃতি দিয়ে বলেন, মন্ত্রী মান্নান আমলাদেরে নিয়ে যথার্থ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় অথচ খবরদারি করছে সরকারী কর্মচারীরা। এমপিরা হচ্ছে সচিবদের উপরে কিন্তু আমলাদের ক্ষমতায়ন এমপি ও রাজনীতিবিদদের সকল অবদান ম্লান করে দিয়েছে। আমলা ইস্যু নিয়ে সংসদে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের প্রধান কারন হচ্ছে পরিকল্পনামন্ত্রীর আমলা বিরোধী উক্তি। তোফায়েল আহমদ সহ অন্যান্য সাংসদরা মন্ত্রীর বক্তব্যে অনুপ্রানিত হয়ে আমলা ইস্যুকে কেন্দ্রকরে সংসদে সরব হয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পরিকল্পনামন্ত্রীর আমলা বিরোধী উক্তি আজ সরকার ও সরকারী কর্মচারীদের মুখোমোখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার দলীয় সাংসদ ও মন্ত্রীদের মুখ থেকে সরকার বিরোধী সমালোচনা অন্যদের সুযোগ করে দিয়েছে। বিরোধীরা এ নিয়ে নানা কটাক্ষ মুলক মন্তব্য করেছে। সরকার ও সরকার প্রধান এই ইস্যু নিয়ে যে বিব্রত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।   

সুনামগঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজে আজ আমলাদের মতো একক কর্তৃত্ব ও দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। একসময় তিনি নিজে ডাকসাইটে আমলা ছিলেন। সেই স্বভাব হয়তো বদলাতে পারেননি। আমলাদের মতো একক সিদ্ধান্তে যা খুশী তাই করে যাচ্ছেন। উন্নয়নের ব্যাপারে জেলার পাঁচ সাংসদ একদিকে আর তিনি চলছেন অন্য দিকে। দল বা সাংসদদের সাথে আলোচনার তিনি কোন প্রয়োজন মনে করছেন না। 

জেলার মন্ত্রী ও পাঁচ সাংসদের মত বিরোধের কারনে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন। সুনামগঞ্জ জেলার ভবিষ্যত উন্নয়ন নিয়ে হতাশ স্থানিয় জনগন। জেলাবাসি মনে করেন জেলার একমাত্র মন্ত্রী ও সাংসদের মধ্যে ঐক্যমত না থাকা হচ্ছে জেলার উন্নয়নের বড় বাধা। জেলার একমাত্র মন্ত্রী এম,এ, মান্নান হচ্ছেন জেলার অবিভাবক। জেলার অবিভাবক হিসাবে পরিকল্পনা মন্ত্রীর উচিৎ দল ও জেলার সকল সাংসদকে নিয়ে সমতার ভিত্তিতে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পক্ষান্তরে দেখা যাচ্ছে তিনি তা না করে একলা চলার নীতি গ্রহন করেছেন। নিজের বাড়ী ডুংরিয়া আর পার্শ্ববর্তী শান্তিগঞ্জ এর উন্নয়ন নিয়ে নিজের যতো শ্রম আর মেধা ব্যয় করছেন। বিগত বছর গুলোতে জেলার উন্নয়নের খতিয়ান ঘাটলে দেখা যাবে জেলার সকল উপজেলা মিলিয়ে যা উন্নয়ন হয়েছে তার সিংহ ভাগ উন্নয়ন একাই হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী এম,এ মান্নান এর নিজ উপজেলায়।

জেলার উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রীর সাথে জেলা আওয়ামীলীগ ও স্থানীয় পাঁচ এমপির প্রথম মতবিরোধ শুরু হয় প্রস্তাবিত সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে। মন্ত্রী চেয়েছিলেন তার বাড়ীর কাছে নিজ পছন্দ মতো জায়গাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হোক। বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের আগেই মন্ত্রী তার এলাকায় স্থান নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। জেলার অপরাপর সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগের বাধার মুখে তিনি তার পছন্দসই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। দল ও সাংসদদের এহেন কর্মকান্ডে মন্ত্রী খুশি হতে পারেননি। সেই সাথে জমি নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ জনদের বানিজ্যের যে আশঙ্কার কথা শুনা যায় তা হয়নি বলে তিনি বেশ ক্ষ্যাপা। মান ও অভিমান থেকে নাকি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবার ব্যাপারে তার নির্লিপ্ততা এর প্রমান।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। সরকার অনেক আগে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব নীতিগত ভাবে গ্রহন করেছে। সংসদে আট মাসের উপর হলো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে। আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এনিয়ে মন্ত্রী-এম,পি কারো কোন চেষ্টা আছে বলেও প্রতিয়মান হচ্ছে না।  

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এখন আবার নতুন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দেখার হাওড়ের পাড়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় স্থাপন হবে ?  এখনো স্থান নির্ধারণ হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়নয়ন কবে হবে ? তার প্রশ্ন আসেনি। এরি মধ্যে নাকি ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের চিন্তা ভাবনা করছে মন্ত্রনালয়। খবরের গন্ধ যদি সত্য হয় তা হলে তাতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ যে আছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত। কেউ হয়তো এর পিছনে কলকাটি নাড়ছে।

ভিসি নিয়োগের পর দেখা যাবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ হবে। হাওয়ায় ভাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বেতন ভাতা হবে। অস্তিত্ব বিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হবে সরকারি অর্থ লুটপাট। অস্থায়ী বিশ্ববিদ্যালয় নাম নিয়ে সে সুযোগে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মন্ত্রীর বাড়ীর আশেপাশে কোন স্থাপনাতে  হয়তো স্থাপিত হবে ‘অস্থায়ী বিশ্ববিদ্যালয়’। পরবর্তিতে দেখার হাওড়ের জীববৈচিত্র‍্যের দোহাই দিয়ে অস্থায়ী ঠিকানা হয়ে যাবে স্থায়ীঠিকানা । যে ভাবে জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিন সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্য ক্লিনিকে করা হয়েছে ‘অস্থায়ী মেডিকেল কলেজ।

অবহেলিত সুনামগঞ্জ সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল আজ পঙ্গুত্ব নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। নামে মাত্র চলছে সেবা দান। উন্নয়নের মডেল হিসাবে বিলাস বহুল ভবন গুলো দাঁড়িয়ে আছে। হাসপাতালে এই নেই-সেই নেই। ডাক্তার নেই। যন্ত্র নেই। টেকনিশিয়ান নেই। নার্স নেই। কর্মচারী নেই। এই নেই আর বিভিন্ন চাহিদার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ইদানিং কালের সব চেয়ে জনপ্রিয় শব্দ ‘ডিও’ সেই ডিও লেটার একের পর এক চালাচালি হচ্ছে কিন্ত কে শুনে কার কথা।

সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত মহা সড়ক ছয় লাইনে উন্নীত করার সরকারি স্বীদ্ধান্ত হয়েছে। জেলাবাসীর দুর্ভাগ্য মাত্র কয়েক কিলোমিটার সিলেট সুনামগঞ্জ সড়ক তাদের মন্ত্রী সংযুক্ত কর‍তে পারেননি। আসলে পারেননি বললে হয়তো ভুল হবে। বলা যায় চেষ্টা করেননি। মন্ত্রীর সামনে সরকারী স্বীদ্ধান্ত হলো। একনেকের সভায় অর্থ বরাদ্দ হলো। তারপর এনিয়ে তার কার্যত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেবার কথা শুনা যায়নি।

সিলেট সুনামগঞ্জ রেল লাইন কোন পথে যাবে এ নিয়ে নতুন ভাবে শুরু হয়েছে কামড়াকামড়ি। পরিকল্পনামন্ত্রীর ৫০ বছরের পুরানা বন্ধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড,মোমেন রেলপথ নিয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী গোসসা করেছেন। নিজের রাজ্যে বন্ধুর অযাচিত হস্তক্ষেপ তিনি সহজে মেনে নিতে পারছেন না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে পরাষ্ট্রমন্ত্রী আফ্রিকার কেউ। ড,মোমেন শুধু সিলেট বিভাগের মন্ত্রী নন সারা দেশের মন্ত্রী। দেশের যে কোন অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে তার কথা বলার অধিকার থাকলেও সুনামগঞ্জ নিয়ে কথা বলার তার কি অধিকার নেই ? যদিও তিনি রেল লাইনের পক্ষে বলেছেন। মন্ত্রী এমপিরা ও রেললাইন চান। তবে কোন দিকে গেলে সুবিধা হবে সে মত দিয়ে তিনি বড়ই ভুল করেছেন। উন্নয়ন হোক সবাই চান। রেললাইন হোক তাও চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও তাই চেয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রীর এতে রাগ কিংবা অভিমান করার কি হলো ?

আসলে রাগ অভিমান এসব কিছুনা। পরিকল্পনামন্ত্রী বিরোধী শিবিরের ৫ সাংসদদের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাল মিলিয়েছেন এটাই সমস্যা। সাংসদরা যা চেয়েছে আসলে মন্ত্রী মান্নান তা চাননা। পরিকল্পনামন্ত্রীর কথা হলো আমি যা চাইনা অন্য কেউ চাইলে আমি তা মানিনা।

সুনামগঞ্জ জেলার সকল উন্নয়ন এখন নির্ভর করছে পরিকল্পনামন্ত্রীর ইচ্ছার উপরে। রেল লাইন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জেলা হাসপাতাল সহ জেলার সকল উন্নয়নের বাধার পিছনে হচ্ছে মন্ত্রী ও সাংসদদের মধ্যে ঐক্যমত না হওয়া। জেলার উন্নয়নের ব্যাপারে জেলার পাঁচ সাংসদ আজ একদিকে আর মন্ত্রী মান্নান চলছেন অন্যদিকে। দল ও সাংসদদের মতকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রী মান্নানের একলা চলো নীতির যতদিন পরিবর্তন হবে না ততোদিন সুনামগঞ্জের উন্নয়ন হবে না। যদি হয় তাহলে তা হবে বিএনপি জামাতের ভোট ব্যাংক খ্যাত শান্তিগঞ্জ আর ডুংরিয়ার উন্নয়ন। দক্ষিন সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর আসনের যে অঞ্চল নৌকার ভোট ব্যাংক সে এলাকা হবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।

শুনেছি মন্ত্রীর এলাকা বীরগাঁও থেকে পাগলা সড়কের নাকি বেহাল অবস্থা। সড়কের উন্নয়ন না হলেও এর পরিবর্তে মন্ত্রী এলাকার জনগনকে বিমানবন্দরের স্বপ্ন দেখান। পাগলা থেকে বীরগাঁও বিমান চলাচল করলে সড়কের কি প্রয়োজন? একদিন হয়তো তাই হবে মন্ত্রির উন্নয়ন। সে উন্নয়ন হবে সড়ক পথের নয়। আকাশ পথের। জনগন গাড়ীতে নয়। রেলে নয়। হাওয়াই জাহাজে চড়ে পাগলা থেকে বীরগাঁও বাড়ী যাবে। হবে হাওয়াই উন্নয়ন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn