পারিবারিক অভিবাসন বন্ধে কঠিন বিরোধিতার মুখে পড়বে ট্রাম্প প্রশাসন
চেইন ইমিগ্রেশন নামে পরিচিত এ প্রক্রিয়ায় গত দশকে ৯০ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিককে আমেরিকাতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন আমেরিকা অধিকাংশ গ্রীনকার্ডই সেকেলে পারিবারিক বন্ধনের পদ্ধতিতে প্রদান করেছে, মেধা কিংবা দক্ষতার নিরিখে নয়। এ নিয়মের অধীনে একজন অভিবাসী তার বর্ধিত পরিবারের সব অদক্ষ শ্রমিক সদস্যদের আনতে পারেন। এটা মজুরির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ঘাটতি বাড়ায়। হোয়াইট হাউসের প্রচারণায় বলা হচ্ছে, চেইন ইমিগ্রেশন জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করে। এর ফলে গ্রীনকার্ডধারী স্বল্প সময়ে আমেরিকার নাগরিক হন। ভোটাধিকার পান। ফেডারেল ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগের সুযোগ পান। পরিসংখ্যান মতে, চেইন ইমিগ্রেশনের ফলে দুজন নতুন অভিবাসী আমেরিকায় প্রবেশ করে সাতজন আত্মীয়কে আমেরিকাতে নিয়ে আসেন। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে, বর্ধিত পরিবারের অভিবাসন কীভাবে বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহকে আমেরিকায় আসার সুযোগ করে দেয় তা উল্লেখ করেন। নিউইয়র্ক নগরীতে আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচেষ্টা ধৃত আকায়েদ উল্লাহ বর্ধিত পরিবারের আত্মীয় হিসেবে ২০১১ সালে আমেরিকাতে এসেছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব আমাদের জাতি ও জনগণকে রক্ষা করা। অতি সম্প্রতি আমরা দেখেছি আমেরিকা কীভাবে হুমকির মুখে রয়েছে। সন্ত্রাসীরা নিউইয়র্ক নগরীতে আমাদের সড়ক এবং পাতাল রেলে ক’মাসের মধ্যে দুইবার আঘাত হেনেছে। দুজন সন্ত্রাসীই আমাদের অকার্যকর অভিবাসন নিয়মের অধীনে আমেরিকাতে এসেছেন। আমরা দ্রুত এটার সংশোধন করতে চাই।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কংগ্রেসকে চেইন ইমিগ্রেশন এবং ভিসা লটারির ইতি ঘটিয়ে এর পরিবর্তে মেধা-ভিত্তিক অভিবাসন বিধি চালু করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের কাছে আমেরিকান পরিবার, করদাতা এবং নিরাপত্তাকে প্রধান বিবেচ্য।’ পারিবারিক অভিবাসনের অধীনে ২০০৫ সাল থেকে আমেরিকাতে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক আমেরিকাতে এসেছেন। বিগত দশকে মেক্সিকো থেকে ১৭ লাখ অভিবাসী আমেরিকাতে ঢুকেছে। গড়ে একজন ম্যাক্সিকান অভিবাসী ছয়জন বিদেশি আত্মীয়কে লাগাতার অভিবাসনের অধীনে আমেরিকাতে নিয়ে আসেন, যা অন্যান্য দেশ থেকে আসা হিজরতকারীদের তুলনায় বেশি। গত দশ বছরে চেইন ইমিগ্রেশনের আওতায় ভারত এবং ফিলিপাইন থেকে ছয় লাখ করে, চীন থেকে পাঁচ লাখ এবং পাকিস্তান থেকে এক লাখ ৭৭ হাজার নাগরিক আমেরিকাতে আসেন। একই ব্যবস্থার আওতায় ইরান, সিরিয়া এবং সুদানের মতো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস-কবলিত দেশ হতেও অবাধে আত্মীয়-স্বজনেরা আমেরিকাতে আসা অনুমোদন করে। ২০০৫ সাল থেকে সব মিলিয়ে এ তিনটি দেশ থেকে এক লাখ ১৭ হাজার অভিবাসী আমেরিকাতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেইন অভিবাসনের ইতি ঘটাতে চান। এর ফলে আমেরিকাতে বৈধ অভিবাসীদের আগমন বছরে অর্ধেক কমে যাবে। বছরে এক লাখের বেশি অভিবাসীর সংখ্যা কমে ৫০ হাজারে দাঁড়াবে। ফলে আমেরিকান কর্মজীবীদের মজুরি বাড়বে এবং জনগণকে স্থিতিশীল করবে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচারণা চলছে। এর মধ্যে রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন এবং সিনেটর ডাভিড প্রিডিউর রেইজ নামের একটি আইনের খসড়া উপস্থাপন করেছেন মার্কিন কংগ্রেসে। রিফোর্মিং আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফর স্ট্রং এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) নামে উপস্থাপিত এ আইন প্রস্তাব নিয়েই রক্ষণশীলদের মধ্যে এখন প্রচারণা চলছে। শীতকালীন অবকাশের পরই এ আইন প্রস্তাব নিয়ে মাঠ গরম হবে বলেই এ মুহূর্তে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার ভেঙে পড়া অভিবাসন সংস্কার নিয়ে আইন প্রণেতাদের মধ্যে সাধারণ ঐক্য রয়েছে। তবে এ সংস্কার, ঠিক কীভাবে করা হবে-তা নিয়ে ঐক্যে তাঁরা ঐক্যে পৌঁছাতে পারেননি প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বা প্রেসিডেন্ট বাড়াক ওবামার সময়েও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে এ মতানৈক্য সহজেই হয়ে যাবে, এমন মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অভিবাসী সংগঠন এবং অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিবাসন নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সম্প্রতি বাংলাদেশি যুবক আকায়েদ উল্লাহ নিউইয়র্কে পাইপ বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহ হোয়াইট হাউস থেকে পারিবারিক অভিবাসন নিয়ে বিষোদ্গার করা হয়। পারিবারিক অভিবাসনের সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহ এবং বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে আলাদা উৎকণ্ঠা দেখা গেছে। অভিবাসন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন বাংলাদেশিদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, পারিবারিক অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথা বললেও, অভিবাসন আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইনের কোনো পরিবর্তন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে করা সম্ভব নয়। তিনি প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পারিবারিক অভিবাসনের যেসব আবেদন এর মধ্যে সরকারি ফি দিয়ে অপেক্ষমাণ আছেন, তাদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কংগ্রেসে অভিবাসন আইনের পরিবর্তন হলে, পরিবর্তন কীভাবে হচ্ছে, তা টের পাওয়া যাবে। এ নিয়ে আইন প্রণেতারা বিতর্ক করবেন। কংগ্রেস এবং সিনেটে পাশ হওয়ার পরই প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর না করা পর্যন্ত আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।