পীর হাবিবের কলাম-
রাজনীতিবিদগণ মিলিয়ন ডলার প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন কি?
কথায় আছে যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে কালে কালে যুগে যুগে প্রবীণেরা জীবনের অভিজ্ঞতায় এই সত্য উচ্চারণ করেছেন। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অতীতের দিকে তাকিয়ে অনেকে বলেন, ব্রিটিশের শাসন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও আইয়ুব-এরশাদের উন্নয়ন! অর্থাৎ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে যে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটেছিল গণঅভ্যুন্থানে এই কথার মধ্য দিয়ে তার অবৈধ শাসনামলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাফাই গাওয়া হয়। একথা সত্য যে মহান নেতা পাকিস্তানি ওপনেবেশিক শাসনের জাল ছিন্ন করে কঠিন লড়াই, সংগ্রাম, অমিত সাহস নিয়ে গোটা জাতিকে এক মোহনায় মিলিত করে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, নির্লোভ, আদর্শিক চরিত্র নিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথে দৃঢ়তার সঙ্গে জনগণের আস্থা অর্জন করে জাতিকে শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীকার-স্বাধীনতার মন্ত্রে এই জাতিকে যেভাবে উজ্জীবিত, বীরত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে এক মোহনায় মিলিত করে মুক্তিযুদ্ধে ডেকেছিলেন তার নেপথ্যে ছিল তার আবেগঘন, যুক্তিনির্ভর তেজ্বসী বাগ্মিতা বা ভাষণ। যে কারণে ৭১ এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে একটি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বেলিত করে মহান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তার জনগণকে প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন, সেই মহান ভাষণটি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবেই নয়; এক মহাকাব্য হিসাবে চিত্রিত হয়েছে। যুগের পর যুগ সেই ভাষণ তার ঐতিহাসিক মর্যাদা ও স্বীকৃতিতে উজ্জল হয়ে উঠেছে।
যেন তার সেই ভাষণই এই জাতির ইতিহাস, কিন্তু যখন পরাধনীতার নাগপাশ থেকে ছিন্ন হওয়া একটি স্বাধীন জাতির জীবনে মানুষ বলে স্বৈর শাসক আইয়ুব খানের উন্নয়নের কথা, তখন এই লজ্জা ও গ্লানি কেবল মানুষেরই নয়, ব্যর্থতার দায় সকল শাসক ও রাজনৈতিক শক্তিকেই নিতে হয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের শরীরে ব্রিটিশ শাসনের নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন উপমাহদেশজুড়ে প্রায় ২শ বছরের ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকমী মানুষের লড়াই, সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং আত্নদান যেন গৌরবের মহিমায় মহিমান্বিত করেছে; তেমনি বছরের পর বছর উপনিবেশবাদী শাসনের নিষ্ঠুর অত্যাচার, নির্যাতন আমাদের পূর্বপুরুষকে বহন করতে হয়েছে।
সেখানে যে জাতির সংগ্রামে ব্রিটিশের সূর্য অস্তমিত হয়েছে, পাকিস্তানের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্ত ও বীর বাঙালির যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, সেখানে ব্রিটিশের শাসন, আইন আইয়ুব খানের মতো স্বৈরশাসকের উন্নয়নের প্রশংসা আমাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে বড় বেশি লজ্জা ও বেদনার। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার পরিজনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পথে এদেশের একদল বিশ্বাসঘাতক সন্তান ক্ষমতার উচ্চাভিলাষে মানবসভ্যতার ইতিহাসে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কলংকিত করে গোট দেশকে গনতন্ত্রহীন সামরিক শাসনের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে গণতন্ত্র মুক্তির সংগ্রাম বলুন, আন্দোলন বলুন তার সব হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ছাত্র সমাজের আন্দোলনের ফলে। সেই তীব্র গণ আন্দোলনে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছে।
সেনাশাসন উত্তর গণতন্ত্রের জামানায় ২৭ বছর পরও এসে মানুষ যখন গান করে এরশাদের উন্নয়নের তখন সেই ব্যর্থতা ও লজ্জা আমাদের সবার হয়ে যায়। সকল রাজনৈতিক নেতৃত্বের হয়ে যায়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই আমরা স্বাধীকার-স্বাধীনতার পথে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছি; তেমনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ডাকেই গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসনের কবল থেকে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছি। কিন্তু তবুও কেন মানুষ মাঝে মধ্যে বুকভরা বেদনা নিয়ে ইতিহাসের পতিত সেইসব প্রশ্নবিদ্ধ, মিমাংসিত শাসনামলের প্রশংসা করে তখন প্রশ্ন জাগে, এই ব্যর্থতার দায়ভার কার?
নিঃসন্দেহে বলা যায়, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের, একটি গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় বারবার অভিষিক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই তা বহন করতে হয়। এই দায় জনগণকেই নিতে হয়। বেদনায় দগ্ধ হতে হতে বয়ে যায় একটি জাতির জীবন। তবুও আমরা সত্যের মুখোমুখি আমরা দাঁড়াতে পারি না। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের আদর্শ ভিত্তি ৭২ এর সংবিধান, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণয়ন করেছিলাম। সেই সংবিধান জনক হত্যার মধ্য দিয়ে এ যাবৎ সকল সরকারের ইচ্ছেমাফিক সুবিধামতো কাঁটাছেড়া হয়েছে। আমরা আদর্শিক জায়গা থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে বিচ্যুত হয়েছি। আমরা আমাদের ইতিহাসের গৌরবকে মাথার তাজ বানিয়ে পথ চলতে পারিনি। কখনো উগ্রতা, কখনো হটকারীতা, কখনো বা ব্যক্তিতন্ত্র, কখনো বা গোষ্ঠীতন্ত্র, কখনো বা প্রতিহিংসা আমাদের ক্ষত বিক্ষত করেছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আমরা একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে প্রায় ২ শ বছরের ব্রিটিশ শাসনের গোলামির শৃঙ্খল মুক্তির জন্য তাদের প্রণীত আইন-কানুনের সংস্কার করতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইতিহাসের চাকাকে উল্টোপথে ঘুরিয়ে দিলেও আমরা আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তিতে এখনো ফিরে দাঁড়াতে পারিনি। আমাদের রাজনীতির ইতিহাস আত্নত্যাগের ইতিহাস। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতির প্রতিবাদ প্রতিরোধের বীরত্বের সংগ্রামমুখর ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে আমরা ভুলণ্ঠিত করেছি। জনগণের কাছে দেয়া ওয়াদা সকল রাজনৈতিক শক্তি কমবেশি ভঙ্গ করেছেন। সকল শাসকেরাই ক্ষমতায় মোহে কম বেশি অন্ধ হয়েছেন। স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মাথায় এসে তাকালে দেখা যায় ক্ষমতায় উপমহাদেশের এতিহ্যবাহী প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা কেবল মুজিব কন্যাই নন, ৩৬ বছরের সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তার উত্থান পতনে ঘেরা। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭৫ এর ১৫ আগস্টই নয়, সামরিক তন্ত্রের যন্ত্রণাবিদ্ধ সময়ই নয়, গণতন্ত্রের জামানায় বিরোধীদল দমন নিপীড়নের পাশাপাশি ২১ শে গ্রেনেড হামলা রাজনীতিতে সকল আস্থা বিশ্বাস শেষ করে দেয় ক্ষতই তৈরি করেনি; জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করেছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসি হয়েছে। সামরিক তন্ত্রের পতন হয়েছে। বিদেশী ষড়যন্ত্রের পথ এখনো জাতীয় রাজনীতির অন্ধকার গলিতে বন্ধ হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তির বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন কি ? স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও কেন আমাদের সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জাতীয় জীবনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাই নয়; রীতিমতো ঘাম ঝড়ে। কেন আমাদের শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা আজো প্রতিষ্ঠা হয়নি? কেন আমাদের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা দুর্বলই নয়, ক্ষয় হয়ে গেছে। কেন আমাদের জাতীয় জীবনে রাজনীতি তার অতীতের গৌরব হারিয়েছে? যে গৌরব ছিল, যে এতিহ্য ছিল সততার, নির্লোভ, আত্নত্যাগের, মানবসেবার; সেই রাজনীতি আজ কোথায়? যে রাজনীতি আমাদের ইতিহাসের পূর্বসূরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কৃষকের বন্ধু শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ধারণ, লালন ও আমৃত্যু বিশ্বাস করেছিলেন। যে রাজনীতিতে ব্যক্তি নয়, ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর ভোগ-বিলাস, বিত্ত বৈভব নয়, কোনো দল বা ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার নয়, ক্ষমতার গর্বে অভিষিক্ত নয়; গণতন্ত্রের মূল্যবোধের ওপর মানুষের অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠাই ছিল বড় কথা। সেই সাদাকালো যুগের রাজনীতির মহান আদর্শ আজকের রাজনীতিতে কতটা আছে, কতটা নেই সেই প্রশ্নের জবাব কে দেবেন?
বঙ্গবন্ধু জাতির জনক হয়ে, রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ধানমন্ডির একটি সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়িতে জীবনযাপন করেছেন। ঘাতকের বুলেটে এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার হত্যার ভেতর দিয়ে তার আদর্শকে হত্যা করা যায়নি বলে, তিনি চিরভাস্বর, জীবন্ত উজ্জল ও দ্যুর্তিময় হয়ে উঠেছেন। একালের রাজনীতিবিদগণ কথায় কথায় বললেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, উন্নতি হয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে; কিন্তু তারা যদি তাদের জাগ্রত বিবেকের মুখোমুখি হয়ে অন্তরাত্নার ডাক শুনেন তাহলে কি বলতে পারবেন, সেইসব মহাকাব্যের মহানায়কদের রাজনৈতিক দর্শন নির্লোভ, নিরহংকারী, ভোগ, বিলাসহীন আত্নত্যাগের সাদামাটা নিরাবরণ জীবন তারা কতটা বহন করছেন? তারা কি প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন, যখন যে দল ক্ষমতায়, সেই দলের এমপি নেতাদের, মন্ত্রীদের পরিবার পরিজনদের শাসনামলের মধ্যে এত ক্ষমতা, এত বিত্তবৈভব কোথা থেকে আসে? জনগণের সামনে উন্মোচিত কি করতে পারবেন, এমপি-মন্ত্রী হবার আগে তাদের সম্পদ কত ছিল, অর্থ কত ছিল, পরিবারের বিলাসবহুল জীবনের চিত্র কি ছিল? আর ক্ষমতার মেয়াদে কতটা হয়েছে?
রাজনীতিবিদগণ জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করতে গিয়ে জেলখাটেন, জুলুম সহ্য করেন, পরিবারকে অনিশ্চিত পথে ঠেলে দেন। এটি যেমন সত্য, ঠিক এটি কি সত্য নয়; ক্ষমতা পাওয়ার পর রাতারাতি তাদের জীবনযাত্রা বদলে যায়, সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়? অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটান। যদি সেগুলো সত্যি হয় তবে তা কিসের ভিত্তিতে? একালের এমপি মন্ত্রীগণ কতটা সংসদে দাঁড়িয়ে কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করেন, কতটা সংবিধানকে লালন করেন; যাদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে পথ হাঁটেন, সেইসব ইতিহাস স্রষ্টা বিশ্বনন্দিত নেতাদের চারিত্রিক গুণাবলী, নির্লোভ, নিরাবরণ, সাদামাটা জীবন ধারণ করেন? তাদের ছায়ায় তাদের রাজনীতির প্রতি অন্ধ প্রশাসনের কর্মকর্তা, পেশাজীবীরা কিভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা, সরকারি প্লট, বিদেশ সফর এবং ভোগ-বিলাসের জীবন উপভোগ করেন? জনগণের ওপর কবের বোঝা বাড়ছে। ভ্যাট, ট্যাক্স দিবে জনগণ আর ভোগ বিলাসের জীবনযাপন করবেন রাজনীতিবিদ ও তাদের আজ্ঞাবহ আমলা ও পেশাজীবীগণ। সংবিধান এই ক্ষমতা কোথায় দিয়েছে? এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের জন্য এত এতবার জীবন দিয়েছে তারা বলতে পারবেন, রাষ্ট্রীয় কোন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে তারা স্বাধীন ও শক্তিশালী করেছেন? তারা কি বলতে পারবেন, যে জাতি তাদের ও তাদের পূর্বসূরীদের ডাকে জীবন দিতে কাপর্ণ্য করেনি, রাজপথে যেতে ভয় পায়নি; সেই জনগণকে গণতন্ত্রের স্বাদ কতটা দিয়েছেন? তারা কি বলতে পারবেন, জনগণকে দেয়া অঙ্গিকার অনুযায়ী কেন আজো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি? সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা যেখানে বাই সাইকেলের মতো দুই চাকার ওপর ভর করে চলে, সেখানে কেন আজো শক্তিশালী সরকারি দল ও বিরোধী দলের জন্ম হয়নি? কেন আজো একটি কার্যকর সংসদ জাতির জীবনে আলোর মুখ দেখেনি? কিসের জন্য, কার ব্যর্থতায় সংসদ হয়ে উঠেনি সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু? গণতান্ত্রিক ধারায় এমপিগণ কেন জাতীয় ইস্যুতে আইন প্রণয়নে এবং নীতি প্রণয়নে কিংবা জনজীবনের জলন্ত ইস্যু নিয়ে সংসদে বিতর্কের ঝড় তুলতে পারেন না? স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের কথা বলা হয়, কিন্তু স্থানীয় সরকারের ওপর এমপিদের কর্তৃত্ব কেন বজায় রাখা হয়?
একটি জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার শূণ্যতার ওপর ঘুষ, দুর্ণীতি, তদবিরবাজি, মেধাহীনদের, বিতর্কিতদের ঘিরেন সিন্ডিকেটতন্ত্রের রাজত্ব চলে। বড় বড় দলগুলো আদর্শিক গণমূখী, নির্লোভ, নিরাবরণ, সাদামাটা জীবনের আদর্শিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সংসদে মনোনয়ন দিয়ে জয়ী করে আনতে পারছেন না। সমাজের অনেক গুণী মানুষদের যারা জাতীয় জীবনে গুরুত্ব বহন করেন মেধা ও যোগ্যতায়, নীতি ও আদর্শে তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয় যে, তারা ভোটে জিতে আসতে পারেন না। প্রশ্ন হচ্ছে- এই ব্যর্থতার দায়, এই লজ্জার দায় তাদের নাকি আমাদের নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের? রাষ্ট্রের উন্নয়নে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে যাকে যেখানে ঠাঁই দেয়ার কথা সেটি কি আমরা করতে পারছি? রাজনৈতিক কর্মীদের কেন মূল্যায়ণ হচ্ছে না? কেন মন্ত্রী, নেতা, এমপির মৃত্যু হলে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের মনোনয়ন দেয়া হয়? যোগ্য নেতাদের উপস্থিতি থাকার পরেও এই অপসংস্কৃতির দায় কে নেবে? কিসের জন্য ২৭ বছর ধরে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে? সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে যোগ্য ও মেধাবি, দক্ষ নারীদের টেনে আনা হচ্ছে কি? না হয়ে থাকলে সেই দায় কার? রাজনীতিবিদগণ মিলিয়ন ডলার প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন কি? ভোগ বিলাসের জীবন দুনিয়াজুড়ে ব্যবসায়ী ও শোবিজ জগতের সুপারস্টাররা ভোগ করে থাকেন, সেখানে রাজনীতিবিদরা সাদামাটা, নিরাবরণ জীবনের জীবনের বিপরীতে এই ভোগ বিলাসের পথে যেভাবে হাঁটেন, জীবনযাপন করেন তার উৎস কি? কে দেবে এর জবাব?
লেখক:পীর হাবিবুর রহমান ,সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সূত্র: আমাদের সময়