সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে চাঞ্চল্যকর ধর্ষন মামলার প্রধান আসামী মাহমদ আলী (৩৫) অবশেষে গ্রেফতার হয়েছে। ১৪ আগস্ট শনিবার ভোরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ইছাকলস ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাগজুড় গ্রামে শ্বশুড় ইছদ্দর আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই আবু সায়েম চৌধুরী ও সদর মডেল থানার এসআই মোঃ শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে ২ থানার সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেন। গ্রেফতারের পর ধর্ষক মাহমদ আলীকে তার গ্রামের বাড়ী ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রাম হয়ে জেলা সদরে নিয়ে আসা হয়।
ধর্ষক মাহমদ আলী সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইনে দায়েরকৃত ধর্ষন মামলার প্রধান আসামী। মামলার বিবরনে প্রকাশ,গত ৩ রা জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ২টায়, সৎমা জুনু বেগম স্বামী সিরাজ মিয়াকে চায়ের সাথে নেশা পান করিয়ে তার স্কুল পড়ুয়া কিশোরী কন্যা কে ফুসলিয়ে জোরপূর্বকভাবে সুনামগঞ্জ সদর থানার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামের পিত্রালয় হতে সিলেটে নিয়ে যায়। ঐদিন রাত ১২টায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন মা আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে ভিকটিম সৎ কন্যাকে,পরকীয়া প্রেমিক মাহমদ আলীর দ্বারা জোরপূর্বক ধর্ষন করায়। ভিকটিমের সৎমাতা ধর্ষনকারীর সহযোগী জুনু বেগমের সাথে উক্ত ধর্ষক মাহমদ আলীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের খালা বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে, মোকদ্দমা দায়ের করেন। মামলায় বিজ্ঞ আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআরক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সদর থানার পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। মামলায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের আছমত আলীর বখাটে পুত্র ৩ সন্তানের জনক মাহমদ আলী (৩৫) এবং একই গ্রামের মৃত মুসলিম আলীর কন্যা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় ইব্রাহিমপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জুনু বেগম (৩৫) সহ অজ্ঞাত লোকদেরকে আসামী করা হয়। মামলার বিবরনে জানা যায়,ভিকটিম এতিম কিশোরীর মায়ের সাথে সিরাজ মিয়ার প্রথম বিবাহ হয়। জন্মের ১ বছরের ব্যবধানে ভিকটিমের মা মারা গেলে জুনু বেগম পরকীয়া প্রেমিক সিরাজকে ব্ল্যাকমেইল করে তার ২য় স্ত্রী ও ভিকটিমের সৎমা হিসেবে ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামে শ্বশুড়ালয়ে আসে।
অন্যদিকে মাতৃহীনা ভিকটিম কিশোরী নানা নানীর সংসারে বড় হয়। ৯ বছর বয়সের সময় নানা নানীর কাছ থেকে সিরাজ তার কন্যাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। সৎমা জুনু বেগম ৯ বছর বয়স থেকেই ভিকটিম কে দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামে সৎমা নামের ঐ ডাইনী জুনু বেগমের বিরুদ্ধে একাধিকবার সামাজিক সালিশ হয়। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল সোমবার রাত ৮টায় ভিকটিমকে মারপিট করে পিত্রালয় থেকে বিতাড়িত করে দেয় সৎমা জুনু বেগম। এ ঘটনায় ভিকটিমের খালা রেজিয়া বেগম বাদিনী হয়ে ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের মৃত আছমত আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ও ভিকটিমের সৎমাতা জুনু ও ভগ্নিপতি সিরাজের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সদর থানার এসআই মোঃ শরীফ উদ্দিনের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত স্কুল ছাত্রী ভিকটিমকে সিলেটে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্ষনের ঘটনা ঘটায় জুনু বেগম।
ভিকটিম এতিম কিশোরীর পক্ষে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট চান মিয়া ও এডভোকেট মাসুদুল হক সর্দার সোমেল। পুলিশ জানায়,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ধর্ষন মামলার আসামী সৎমা জুনু বেগমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। ১৮ জুলাই রোববার রাত ১১ টায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামে সদর থানার এসআই শরীফ উদ্দিন ও ছাতক থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ সহিদুর রহমান,কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি কে.এম নজরুল ইসলাম ও ছাতক থানার ওসি মো: নাজিম উদ্দিন ধর্ষন মামলার আসামী জুনু বেগমকে প্রথম দফায় ও প্রধান আসামী মাহমদ আলীকে ২য় দফায় গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,ধর্ষনকারীর সহযোগী জুনু বেগমকে আমরা প্রথমে গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে ঐ আসামী জেলহাজতে আছে। সর্বশেষ মূল আসামী ধর্ষক মাহমদ আলীকেও শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৮৯ বার