প্রণোদনার অর্থ বিতরণে কিছু চুরি-চামারি হলেও সেটি মানুষের কাজে লেগেছে** করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। এই প্রণোদনার অর্থ বিতরণে কিছু অনিয়ম-অব্যাবস্থাপনা ও চুরি-চামারি হলেও সেটি সার্বিকভাবে মানুষের কাজে লেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ‘সিলেকটিভ লকডাউন’ দিয়েছেন।

সেই সঙ্গে অর্থনীতি সচল রাখতে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। এখানে কিছু চুরি-চামারি, মিসিং-মিসফায়ারিং হলেও প্রণোদনা কাজে লেগেছে। দেশের সব শ্রেণির মানুষের কঠোর পরিশ্রমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। এভাবেই এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সফল হব। সোমবার (২২ নভেম্বর) এলডিসি উত্তরণ নিয়ে জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে ইউপি নির্বাচন চলছে। অত্যন্ত আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপি প্রথমে বলল, নির্বাচন করব না। এখন তাদের লোকজন বেনামে নির্বাচন করছে। এতে কোনো বাধা নেই।

কিন্তু পরিষ্কার গণতন্ত্র চাইলে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। মাঠ ছেড়ে গেলে চলবে না। খেলার জন্য মাঠে নামতে হয়। গ্যালারিতে বসে খেলা যাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে কার্যকর করেছে। বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে, আওয়ামী লীগের জন্ম খাল, বিল ও ঝিলে। আওয়ামী লীগ মানে আন্দোলন বিকাশ ও পরিবর্তন।

আমাদের শেকড় অনেক গভীরে। ফলে আমাদের সঙ্গে ফাইট করা কঠিন হবে। রাজনীতির খেলায় শেখ হাসিনা ফাস্ট। দুর্নীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, চুরি কিছু হচ্ছে। কিন্তু চিৎকার-চেঁচামেচি করে সেটি থামানো যাবে না। এর জন্য আইন আছে, আইনের মাধ্যমে চোরদের ধরতে হবে। তিনি বলেন, সুশাসন আকর্ষণীয় কথা হলেও মনে রাখতে হবে— ভাত আগে না কফি আগে? ক্ষুধার্ত মানুষের প্রয়োজনে ভাত আগে দিতে হবে।

একইরকমভাবে আরেকটি কথা রয়েছে— উন্নয়ন আগে না গণতন্ত্র আগে? এই কথাটিও মনে রাখতে হবে। সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন,  গণতন্ত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সমাজের মধ্যে ভারসাম্য নেই। মাথাপিছু আয় বাড়লেও লাভ নেই, যদি আয়ের সমবণ্টন না হয়। সেই ভারসাম্য ও সমবণ্টন না থাকায় দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। তিনি বলেন, মেধাবী তরুণরা দেশে থাকতে চায় না।

সুযোগের অভাবে তারা এখানে মেধা চর্চা করতে পারে না। ব্যাপক দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিয়েছে। অনেকে টাকা তৈরির মেশিনে পরিণত হয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে এসে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে। গণতন্ত্র না থাকায় সুশাসন হচ্ছে না। কাগুজে শান্তি বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্প হচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু এগুলোর ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসের গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুল্লা আল মামুন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রশীদ আল মাহমুদ তিতুমীর, বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সেলিমা আহমেদ, সংসদ সদস্য ড. হাবিবে মিল্লাত, অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ ও ড. আবু ইউসুফ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn