প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যুদ্ধ উস্কানি এড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার উস্কানি দিচ্ছে অভিযোগ করে বলেছেন, তবে বাংলাদেশ এ ধরনের উস্কানি এড়িয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে আজ দেশে ফিরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পর এক পর্যায়ে তারা এমন আচরণ করছে, যেন তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। তবে, আমি সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছি, যতক্ষণ আমি নির্দেশ না দেই, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন কোন উস্কানির মুখে তারা কোনভাবেই বিভ্রান্ত না হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের উস্কানিতেও ধৈর্য ধারণ করায় সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ ও জনগনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, আমরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক আছি। প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ভিভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি সকলেই সহানুভূতিশীল, তাদের জন্য সকলেই সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে এবং সকলেই সহায়তায় এগিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে অন্তত আলোচনা শুরু করতে মনোভাবের পরিবর্তন করায় মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, আমি মনে করি, এটি এই ইস্যুর একটি বিশেষ দিন, আমি মনে করি, তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে এবং আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হব।প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানে সরকারের অবস্থানের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রদান করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার। তাদের নারী শিশু এবং বৃদ্ধ লোকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। প্রয়োজনে আমরা দিনে এক বেলা খাব এবং এক বেলার খাবার এই অসহায় মানুষগুলোকে খাওয়াব। তিনি বলেন, এ ধরনের অমানবিক ঘটনায়ও অনেক দেশ অসহায় লোকদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার পাশে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের ১৬ কোটি লোককে খাওয়াতে পারলে এই ৭/৮ লাখ লোককেও কি খাওয়াতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজার থেকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে। রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ লাগবে বেসামরিক প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও তাঁর দলের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোন বিদেশী সহায়তার অপেক্ষা না করে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও ওষুধের ব্যবস্থা করেছি। এতো অধিকসংখ্যক লোককে বাংলাদেশ গ্রহণ করার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী উচ্ছ্বসিত প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা রোহিঙ্গা জনগণের দুঃখ কষ্ট ও ব্যাথা বেদনা বুঝতে পারেন, কেননা তারাও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শরণার্থী জীবন কাটিয়েছেন। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে এক কোটি লোকের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সম্মিলিত ১৪ দল, বিশিষ্ট নাগরিকগণ, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়া পরিবার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ্এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্য মন্ত্রী এড. কামরুল ইসলাম, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ দিলু, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদিক, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বিশিষ্ট লেখক রাহাত খান, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বিএফইউজে’র সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়ান ডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মরতুজা, শিল্পী হাশেম খান এবং আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), সাম্যবাদী দল, তরিকত ফেডারেশন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ, শিল্পী ও সঙ্গীত শিল্পীসহ সম্মিলিত ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।