প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যাওয়ায় তিনি ‘আওয়ামী লীগার’ হয়ে গেছেন, তাই তার পেছনে নামাজ পড়া যাবে না- এমন অভিযোগ এনে গালিগালাজসহ দুর্ব্যবহার করে মসজিদ থেকে বিদায় করে দেওয়া হয় তাকে।ঘটনা ঘটে।রোববার (৭ এপ্রিল) সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের দক্ষিণ কান্দাহাটি জামে মসজিদে। জানা যায়,ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার অপরাধে মসজিদের এই ইমামকে ‘আওয়ামী লীগার’ অভিযুক্ত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃত ইমাম মাওলানা মোবারক আলী জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শরিফপুর গ্রামের বাসিন্দা। লালপুর গ্রামের ওই মসজিদে গত ৮ বছর ধরে ইমামতি করছিলেন তিনি। তিনি ওই মসজিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে শিশু শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষকও ছিলেন।

বর্তমানে নিজের বাড়িতে অবস্থান করা মাওলানা মোবারক হোসেন স্থানীয় পত্রিকা ‘সুনামগঞ্জের খবর’কে জানান, গত ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম বর্ষপুর্তির অনুষ্ঠানে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মসজিদ কমিটির সবাইকে অবগত করেই প্রোগ্রামে গিয়েছি। সেখান থেকে ফিরে আসার পর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, আমি নাকি আওয়ামী লীগার হয়ে গেছি। তিনি অভিযোগ করেন, আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মসজিদের ভেতরেই আমাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন গ্রামের দারু মিয়া। আমাকে নানাভাবে অপমান করা হয়েছে। মান-সম্মানের ভয়ে আমি চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনার সবকিছুই আড়াল থেকে করছেন সুনামগঞ্জ নতুন কোর্ট মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম। দারু মিয়া ও জজ মিয়া তার আত্মীয়। মাওলানা তাজুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুনামগঞ্জ অফিসে গিয়েও আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন।  অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ নতুন কোর্ট মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেন, মাওলানা মোবারক হোসেনকে কেন, কি কারণে গ্রামের লোকজন বাদ দিয়েছেন তা আমি জানি না। গ্রামের ৮-১০ জন মুরব্বি মসজিদের কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের বিষয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাদেরকে নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ডিডি সাহেবের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ইমাম মাওলানা মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের কুৎসা রটাইনি। উনার সব অভিযোগ মিথ্যা।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ তোতা মিয়া বলেন, ইমাম সাহেব ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে গেছেন এটাই তার অপরাধ। উনাকে ঢাকায় যেতে মানা করেছিলেন দারু মিয়া, কামাল মিয়া, ওয়দুদ মিয়া। ইমাম সাহেব বলেছেন, সারাদেশের সব ইমাম সাহেবরা যাবেন, তাই উনাকেও যেতে হবে। ইমাম সাহেব ঢাকায় যাওয়াতেই তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত দারু মিয়ার বলেন, ইমাম সাহেবকে আমি লাঠি দিয়ে মারতে যাইনি। অনেক মুসল্লি ছিলেন মসজিদে, কেউ এটা বলতে পারবে না। আমরা তাকে (ইমাম) বিদায় করিনি। ইমাম সাহেব দোষ করেছেন। নিজের দোষ মেনে নিয়েই তিনি বিদায় নিয়েছেন। ইমাম কি দোষ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন। আঙুল নাচিয়ে কথা বলেছেন। আমি বলেছি মিথ্যাবাদী ইমামের পেছনে নামাজ পড়বো না।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা হেলাল আহমদ বলেন, ইমাম মাওলানা মোবারক হোসেন খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আমি চেষ্টা করেছিলাম বিষয়টি বসে নিস্পত্তি করতে, কিন্তু কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রামে (অনুষ্ঠানে) যাওয়ার অপরাধে আওয়ামী লীগার বানিয়ে অপমান করে উনাকে বিদায় করা হয়েছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ক্বারী আব্দুল জব্বার বলেন, ইমাম সাহেবকে অপমান করে বিদায় করা হয়েছে। দারু মিয়া ইমাম সাহেবকে ধমক দিয়েছেন।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn