প্রধানমন্ত্রী’র আগমনে আশায় বুক বাঁধছেন দিরাই-শাল্লাবাসী
হাওর পাড়ের অসহায় মানুষের কান্না শুনতে কাল রোববার শাল্লা আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার এই সফরকে ঘিরে দিরাই-শাল্লার ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসি আশায় বুক বেঁধেছেন। হাওর পরিদর্শন করে শাল্লা উপজেলা সদরের সাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বুকভরা আশা নিয়ে শাল্লার সাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হবেন হাওর পাড়ের ফসলহারা লক্ষ মানুষ। তাদের একটিই কথা থাকবে, শুধু ত্রাণ নয়, ঘুরে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিতে হবে। আর প্রতিশ্রুতি নয়, হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই আমরা।
দিরাই বিবিয়ানা মডেল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নৃপেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন- হাওর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। কৃষিঋন মওকুফ করতে হবে। নতুন ঋনের ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত নয়, তা দ্বিগুন করতে হবে। বাধ নির্মাণে দুর্নীবাজদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দিরাই ডিগ্রী কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল মিহির রঞ্জন দাস বলেন- একটি এলাকায় যেকোন কারণেই হোক সরকার প্রধানের আগমন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মানুষের মধ্যে আশা আকাংখার সৃষ্টি হয়। আমরা আশাবাদী শুধু ত্রাণ সামগ্রীই নয়, দিরাই শাল্লাবাসী অনেক কিছুই পাবে। শাল্লা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস শহিদ বলেন- সারা বছরব্যাপী হাওর এলাকায় খাদ্য বান্ধব বিশেষ কর্মসুচি চালু রাখা পয়োজন। অনেক মানুষ কষ্ট করছে, কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে চাল ক্রয় করতে পারছে না। তাদেরকে চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
ভাটিবাংলা যুবসমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সাগর দাস বলেন- হাওরপাড়ের বাসিন্দার বোরো ফসল ও হাওরের মাছের ওপর নির্ভরশীল। এবারে কৃষকের ঘরে নেই ফসল। কৃষকদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বল ছিল হাওরের মাছ। এবার মাছও গেল মরে। তার ওপর কাল বৈখাশী ঝড়ের তাণ্ডব। সব কিছু মিলে হাওরবাসীর মহা সংকটে পড়েছেন। এ সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যশনাল সার্ভিস কর্মসুচি চালুর দাবি জানান তিনি। চাপতি হাওর পাড়ের কৃষক সবুজ মিয়া চৌধুরী জানান- বছরের ছয় মাস মাছ শিকার করে জীবন জীবিকা চলে হাওরবাসীর। কিন্তু এবার ধানও গেল, মাছও গেল। কৃষক ও জেলেদের বেঁচে থাকার আর কোন অবলম্বন রইলো না। সব হারিয়ে আমরা নিঃস্ব, নিজেই খাবো কী, আর হাঁস, মুরগি গরু ছাগলকে খাওয়ামুইবা কী! প্রধানমন্ত্রীর আগমনের খবরে আমাদের মাঝে আশার আলো দেখা দিয়েছে। দেখা যাক তিনি আমাদের জন্য কি সুখবর নিয়ে আসছেন।
বরাম হাওর পাড়ের বাসিন্দা মুসলেহ উদ্দীন বলেন- অকাল বন্যা অথবা জলাবদ্ধতায় প্রতিবছরই হাওর আক্রান্ত হয়। এভাবে চলতে থাকলে কৃষককূল ধ্বংস হয়ে যাবে। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না, তাই কৃষকদের বাঁচাতে আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না, এবার স্থায়ী সমাধান চাই। কালিয়াগুটা হাওর পাড়ের কৃষক রবিন্দ্র দাস বলেন- পাউবো নামক (পানি ইন্নয়ন বোর্ড) দানব প্রতিষ্ঠান যেন এদেশে আর না থাকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যরিষ্টার এনামুল কবির ইমন বলেন- জননেত্রী জনগণের কথা শুনতে নিজেই আসছেন। এটি সুনামগঞ্জবাসীর জন্য গর্বের বিষয়। দলীয় সভানেত্রীর আগমনকে স্বার্থক ও সুন্দর করে তুলতে জেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন প্রস্তুতি সভাসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মহিবুর রহমান মানিক এমপি বলেন- প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সুনামগঞ্জবাসীর মাঝে প্রাণের উচ্ছাস সৃষ্টি হয়েছে। জননেত্রী এরই মধ্যে হাওরবাসীর জন্য বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছেন। কৃষকের ফসল রক্ষায় সরকার স্থায়ী চিন্তা ভাবনা করছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর আগমনকে সফল ও স্বার্থক করে তুলতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নব নির্বাচিত সাংসদ ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, গণমানুষের নেত্রী, জনগণের কথা শুনতেই হাওর এলাকায় আসছেন, উনার আগমনে হাওর এলাকার দুঃখ দুর্দশা লাঘব হবে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাটির জনপদের মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখতে এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে আসছেন এবং তিনি ঘোষণা করেছেন কোন মানুষই খাদ্যাভাবে কষ্ট পাবে না। দেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওরবাসির এমন দুর্যোগে সুযোগ নিচেচ্ছন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তালিকা প্রনয়নে অনেক ক্ষতিগ্রস্থরা বাদ পড়ছেন। ওএমএস.খাদ্যবান্ধব,ভিজিডি,ভিজিএফ ও জি আর খাতে বিপুল পরিমান বরাদ্ধ আসলেও যথা সময়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা পাচ্ছেন না।