প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিক উৎপলের বাবার আকুতি
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ১৬ দিনেও প্রাণবন্ত, প্রাণচঞ্চল রিপোর্টার উৎপল দাস আমাদের মাঝে ফিরে আসেনি, যা শুধু উদ্বেগের বিষয় নয়; তার স্নেহশীল বাবা-মায়ের জন্য ঘুম হারাম করা ভয়ের বিষয়। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এত দিন ধরে আমাদের সন্তানতুল্য সহজ-সরল উৎপল দাস। কোথায়, কেমন আছে? কী ঘটেছে তার জীবনে, কেন তার সন্ধান মিলছে না, আমরা বুঝতে পারছি না। সংবাদ সম্মেলনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উৎপলের বাবা বলেন, আমার ছেলে খুজে পাচ্ছিনা। চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, আমি অতি সাধারণ মানুষ। শিক্ষকতা করে জীবন চালিয়েছি। আমাদের কোনো শত্রু নেই। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা জটিলতা আমরা বুঝি না। আমরা আমাদের সন্তানকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।
এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, আমরা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবিতে যে আন্দোলন করছি, সে আন্দোলনের এজেন্ডায় উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। উৎপলকে যত দিন আমরা ফিরে না পাব, তত দিন মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করব।উৎপলের পরিবারের সঙ্গে আজ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দেখা করবেন বলে জানান শাবান মাহমুদ। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে পীর হাবিবেব কথা হয়েছে জানিয়ে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, তিনি (পুলিশ কমিশনার) পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন। তিনি আন্তরিকভাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন (মুন্নি), ঢাকা সাংবাবিদক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আজাদ চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী প্রমুখ। নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপলের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা ওই সংবাদ সম্মেলনে এক হৃদয় বিদরাক দৃশ্যের অবতরণা হয়। সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদ কর্মীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ভাইয়ের সন্ধান চেয়ে উৎপলের বোন বিনীতা বলেন, আমি শুধু ভাইকে ফিরে পেতে চাই। আর কিছু চাইনা। উৎপল কে খুজে দিন। সংবাদিক উৎপলের নিখোঁজের ঘটনায় অনলাইন নিউজ পোর্টালটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি মতিঝিল থানায় জিডি করা হয়। উৎপলের বাবাও একই থানায় আরেকটি জিডি করেন।
উৎপল ফকিরাপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরে। সেই থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ ছিল। তবে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে তার মোবাইল নম্বর থেকে কল আসে বাবা চিত্তরঞ্জনের কাছে। প্রায় ৮ মিনিট কথা বলার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় মুক্তিপন দাবি করা ব্যক্তি। এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ রয়েছে।এর মধ্যে গত সোমবার উৎপলের মোবাইল নম্বর নকল করে স্পুফিং কল করে পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, উৎপল তাদের কাছে আটক আছে। এক লাখ টাকা দিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। চিত্তরঞ্জন দাস এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, নিখোঁজের পর থেকেই তাঁর ছেলের ফোন বন্ধ ছিল। সোমবার হঠাৎ ওই নম্বর থেকে কল করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সর্বশেষ ধানমণ্ডি এলাকায় উৎপলের মোবাইল সচল ছিল। সাংবাদিক উৎপল দাসের নিখোঁজের ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বলেছেন, সরকার এ বিষয়ে অবগত আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরলে সাংবাদিক উৎপলের বিষয়ে তার সাথে কথা বলবো।