প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে ‘কাউয়া’ এখন আলোচনা
ওয়েছ খছরু-
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগে সিলেটে ‘কাউয়া’ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। এই ক্ষোভের কারণ হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে সয়লাব হয়ে গেছে সিলেট নগরী। অচেনা-অজানা, ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নেতারাও বিশাল সব সাইনবোর্ড ইতিমধ্যে বসিয়ে ফেলেছেন । এ কারণে ‘কাউয়া’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। গত বুধবার বিকেলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর ফয়জুল আনোয়ার আলাওর তার নিজের ফেসবুক আইডিতে কাউয়া নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নানা কথা, নানা আলোচনা। ক্রমেই সেটি সামাজিক মাধ্যম আলোচনার পর কাউয়া শব্দটি নেতাকর্মীদের মুখে-মুখে চলে এসেছে। গতকালও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ‘কাউয়া’ প্রসঙ্গটি বারবারই ঘুরে ফিরে নিয়ে আসেন আলোচনায়। আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাওর তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন- ‘চৌহাট্টার উত্তর-দক্ষিণে চোখ মেলে তাকালে মনে হয় সিলেট শহরে কাউয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০শে জানুয়ারি সিলেটে সফর করবেন। তার সফরের সবচেয়ে বড় আয়োজন হচ্ছে সমাবেশ। এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে নগরীর আলীয়া মাদরাসা ময়দানে। নগরীর চৌহাট্টা এলাকার পাশেই হচ্ছে আলীয়া মাদরাসা ময়দান। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে ঘিরে গোটা আলীয়া মাদরাসা, চৌহাট্টা ও রিকাবীবাজার এলাকা বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ইতিমধ্যে ছেয়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে চৌহাট্টা এলাকা থেকে রিকাবীবাজার এলাকা পর্যন্ত ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে। এ দৃশ্য দেখেই নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলে গতকাল জানিয়েছেন ফয়জুল আনোয়ার আলাওর। মানবজমিনকে তিনি বলেন- ‘ওই এলাকায় যারা বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়েছেন তাদের অনেককেই আমরা চিনি না। তাদের কখনো আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। কিছু কিছু সংগঠন রয়েছে সেগুলোর নামও আমরা শুনিনি। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা নিজেদের বিলবোর্ড স্থাপন তো দূরের কথা ব্যানার টানানোর জায়গাও নেই। এসব দৃশ্য দেখেই তিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলে জানান। সিলেট আওয়ামী লীগে ‘কাউয়া’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- কাউয়া শব্দটি সিলেটে বহুল প্রচলিত করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি সিলেটে মাজার জিয়ারতে এসেছিলেন। ওই সময় তিনি সিলেটের আলীয়া মাদরাসা ময়দানে সমাবেশে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি কাউয়া অর্থাৎ কাক থেকে সাবধান থাকার জন্য নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেন। নিজেও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগে কাউয়া ঢুকেছে। তাদের খুঁজে দল থেকে বের করে দিতে হবে।’ সেই থেকে কাউয়া শব্দটি শুধু সিলেটেই নয়, গোটা দেশে আলোচনায় এসেছে। এই ‘কাউয়া’ শব্দটিও ওবায়দুল কাদেরের ছিল না। আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের কাউয়া বলে অভিহিত কলেছিলেন সিলেটের এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। ওবায়দুল কাদের সিলেটে আসার পর তিনি দলের কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ সিনিয়র নেতার সঙ্গে বাসায় গিয়ে দেখা করেন। দায়িত্ব পালনে তাদের দোয়া চান। ওই সময় তিনি দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু নসরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন আবু নসর দলের সাধারণ সম্পাদককে বলেছিলেন, এখন দলের ভেতরে কাউয়া বেশি। আবু নসর সিলেট আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য এক রাজনীতিক। বর্তমানে দলের অবস্থান মূল্যায়ন করে তিনি ‘কাউয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সিলেট আওয়ামী লীগে এখন নেতা-কর্মীর অভাব নেই। হাইব্রিডদের ভিড়ে পিছিয়ে পড়েছেন ত্যাগী নেতারা। তাদের মূল্যায়নও কমেছে দলের ভেতরে। এ কারণে ‘কাউয়া’ নিয়ে দলের ভেতরে থাকা নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন- ‘কাউয়া’রা দলের পদবির বাইরে থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাদের অনেকেই নির্বাচনের মনোনয়ন লাভের চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নাম করে অনেক কাউয়া সরকারি সুবিধাও আদায় করছে বলে অভিযোগ তাদের। আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল আনোয়ার আলাওরের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিরা। তারাও কাউয়া নিয়ে নানা মন্তব্য ও আলোচনা করেন। কেউ কেউ স্ট্যাটাসটি শেয়ারও দিয়েছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন- ‘ভাই বেড়েছে না, ছেয়ে গেছে।’ নুরুল মানিক নামের একজন লিখেছেন- ‘আমাদের বসবাস এখন কাউয়ার সঙ্গে- হতবাক হই-দুঃখিত হই।’ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আ.ন.ম শফিকুল হক আক্ষেপ করে লিখেছেন- ‘বাড়ির কাউয়া হলেও অনেক সময় মেনে নেয়া যেতো’। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সংস্কৃতিকর্মী প্রিন্স সদরুজ্জামান লিখেছেন, ‘কাউয়াদের পৃষ্ঠপোষকদেরও চিহ্নিত করতে হবে।’ মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা জাকির হোসেন লিখেছেন, ‘মাঠেঘাটে আর বিলবোর্ডে সাদা কাউয়া দেখা যায়।’