প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যত দাবি সুনামগঞ্জবাসীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনামগঞ্জ সফরকে ঘিরে নতুন করে আসার স্বপ্ন বুনছেন ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হাওরাঞ্চলের মানুষজন। তারা বলছেন প্রধানমন্ত্রীই পারেন অসহায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটাতে। দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া কথা বলে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। হারোঞ্চলের মানুষজন বলছেন তাঁরা আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চান না, চান প্রতিফলন। রোববার সকাল ১০টায় কয়েকঘন্টার সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জের শাল্লায় আসছেন। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কথা শুনবেন। সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবেন এবং জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন হাওর জনপদের বাসিন্দারা। একই সঙ্গে জেলার সব হাওর ও বিল ইজারা মুক্ত রাখার দাবি তাদের। এমনটি হলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হাওর ও বিল থেকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার করে ক্ষতি কিছুটা পোষাতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাওয়ের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জের জলাশয়গুলো প্রতিবছর প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। ফলে যারা গরীব কৃষক ও মৎস্যজীবী তারা মাছ ধরতে পারে না। এবছর যেহেতু এখানকার মানুষেরা সব ফসল হারিয়েছেন। তাই তাদের সব হাওড় ও বিলে উন্মুক্তভাবে মাছ ধরার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য হাওর ও বিলের ইজারা বাতিলের দাবি আমাদের। এটি করা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত নিজেদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন। একই দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজাও। তিনি বলেন, ভাসান পানিতে কৃষকদের মাছ ধরার অনুমতি দিতে হবে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি। তবে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ সফরে এসে ত্রান ও পুণবার্সন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেছেন, দুর্গত এলাকা ঘোষণার মতো পরিস্থিতির এখনো সৃষ্টি হয়নি। আর হাওর ও বিল ইজারা না দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি বলেন, পুরো হাওর কখনো ইজারা দেওয়া হয় না। কিছু অংশ দেওয়া হয়। ইজারার বাইরে থাকা জলমহাল থেকে সবাই মাছ ধরতে পারেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় জলমহাল আছে ১ হাজার ১১৯টি। এসব জলমহাল মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ইজারা দেয়। জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইজারা হয় ২০ একরের ওপরে থাকা জলমহালগুলো। জেলা প্রশাসন তিন বছরের জন্য এবং মন্ত্রণালয় ছয় বছরের জন্য ইজারা দেয়। অন্যগুলো ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া জেলায় উন্মুক্ত জলমহাল (নদীনালা) আছে ৭৬টি। এগুলো ইজারা হয় না। কেবল দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও হাওর-বিলের ইজারা বাতিলই নয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য আরো কিছু নির্দেশনা চান স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, হাওরবাসীর খাদ্যের নিরাপত্তা ও ব্যাংক-এনজিও থেকে শুরু করে সব ধরণের ঋণ মওকুফ করতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাবো। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন জানান, কৃষকদের ঋণ সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। হাওরাঞ্চলের বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানস্কুগুলোকে আগামী ১ বছরের জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিতে হবে। হাওরাঞ্চলের বাঁধ নিমার্ণে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হাওর এলাকা নিয়ে হাওর ইকোনমিক জোন গঠনেরও দাবি আমাদের।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, সরকারে দেওয়া ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে হবে। এখনো ত্রান সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে। এই কার্যক্রম ইউনিয়ন ছাড়িয়ে ওয়ার্ড পর্যায়ে নিতে হবে এবং আগামী বৈশাখ পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। অকাল বন্যায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ কৃষক পরিবার। তবে স্থানীয়দের দাবি, হাওরের ৯৫ শতাংশ ফসলই তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ কৃষক পরিবার। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বরকত খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার জন্য শাল্লায় এক হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষকদের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।