প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার আগে দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে একাংশ প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে। পরে সমিতির সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহ পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ অজি উল্লাহর নেতৃত্বে অপর একাংশ সংবাদ সম্মেলন করতে আসে। এ অবস্থায় বিএনপি-সমর্থক ও আওয়ামী লীগ-সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদ চলে। উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, সমিতির সভাপতির বক্তব্যের পর অন্য কোনো ব্যক্তির আইনজীবী সমিতির নামে কোনো সংবাদ সম্মেলন বা কোনো কিছু করার এখতিয়ার নেই। যদি কেউ এ রকম কিছু বলেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত। কেউ এমন চেষ্টা করলে তা আইনজীবী সমিতির বক্তব্য হবে না। প্রায় ১০ মিনিটের মতো বিএনপি ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা চলে। একপর্যায়ে সমিতির সহসভাপতি বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আপত্তি জানাতে থাকেন। পরে তিনি সমিতির প্রবেশপথে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন।
আগের ঘোষণা অনুসারে, দুপুর ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি। কাজেই রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান—বিচার বিভাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিন বিভাগ—শাসন, আইন ও বিচার বিভাগ। সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। সেই অভিভাবককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিমান দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি, অভিমান ভুলে বিচার বিভাগ রক্ষায় এগিয়ে আসুন।’ জয়নুল আবেদীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে গেলেন যে অতীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কখনো করেননি। এই আইনজীবী সমিতি মনে করে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার জন্য অন্তত ধীর থাকবেন।
এর আগে সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রশ্ন এসেছে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। আইনমন্ত্রী বলেছেন, উনি অসুস্থ, চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠি প্রধান বিচারপতির নয় দাবি করে তিনি বলেন, ওই চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা চিঠি। ২ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রথম জানিয়েছিলেন যে উনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন; উনি কীভাবে জানলেন? রাষ্ট্র জড়িত আছে বলেই উনি জেনেছেন। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে সহসভাপতি উম্মে কুলসুম বেগম, সহসম্পাদক শামীমা সুলতানা, সদস্য শেখ তাহসিন আলী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে অজি উল্লাহ বলেন, ‘সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। আমরা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, উনি ছুটি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন স্বেচ্ছায়। ছুটি শেষে আবার ফিরে আসবেন। বিচারকাজ পরিচালনা করবেন।’
প্রশাসনিক পরিবর্তন বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত নন জানিয়ে অজি উল্লাহ বলেন, ‘৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে যাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হবে, তিনিই প্রশাসনিক ও বিচারিক সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সাংবিধানিকভাবে তাঁর এ কাজ পরিচালনায় বাধা নেই। এ নিয়ে সভাপতি-সম্পাদক বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্য প্রদান করার জন্য সাংবাদিকদের জানানোর পর সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অনুগামী আইনজীবীরা বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেননি। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ প্রধান বিচারপতি ‘বিব্রত’ হয়েছেন—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অজি উল্লাহ বলেন, রায় প্রকাশের পর রায় নিয়ে যেকোনো গোষ্ঠী সমালোচনা করতে পারেন। ওই সমালোচনার জন্য কারও ব্যথিত, দুঃখিত, বিব্রত বোধ করা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। গঠনমূলক সমালোচনা করা ব্যক্তিগত অধিকারের পর্যায়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।